ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন প্রতিবন্ধী শাকুলের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন প্রতিবন্ধী শাকুলের মাঠে ছাগল চড়াচ্ছেন শাকুল। ছবি: বাংলানিউজ

নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম না। তাদের কেউ কেউ হয়ে গেছেন বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এমনকি বিজ্ঞানীও। তবে আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীদের বোঝা মনে করেন পরিবারের বাকি সদস্যরা। বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে দেখা যায় এসব প্রতিবন্ধীদের। থাকেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত।

তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে মেহেরপুর জেলার গোপালপুরের জামাতের ছেলে শাকুলের ক্ষেত্রে। মাত্র ১০ বছর বয়সে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে দু’হাত হারান তিনি।

অভাবের পরিবারে অবহেলিত জীবন কাটতে থাকে তার। কী করবেন এই বয়সে, ভবিষ্যতে কী আছে ভাগ্যে, এমন অনেক বিষয় তাকে ভাবিয়ে তুলেছে অনেকবার।

এভাবে অবহেলার মধ্যেই কেটে যায় তার চারটি বছর। পরে বাবার জমানো টাকায় দু’টি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল কিনে দেওয়া হয় শাকুলকে। বছর ঘুরতেই তার ছাগল যেন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। বছর শেষে দুই ছাগল থেকে তার হয়ে যায় ৬টি ছাগল। এভাবে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলই তার ভাগ্যের পরিবর্তন এনে দেয়। বর্তমানে মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন নিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছেন হাত হারানো শাকুল।

২০১৩ সালে একই গ্রামের তারিফার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শাকুল। তাদের ঘরে সাদিয়া নামে পাঁচ বছর বয়সী এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। স্ত্রী তারিফাকে কিনে দিয়েছেন সেলাই মেশিন। প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করেন তারিফা। প্রতিবন্ধী হয়েও স্বাবলম্বী হবার গল্প বাংলানিউজের সঙ্গে শেয়ার করেন তিনি।

প্রতিবন্ধকতা‍র কাছেকে হার না মানার বিষয়ে শাকুল বাংলানিউজকে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে আমি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি যখন বৈদ্যুতিক তারে দুই হাত হারাই, তখন নানা চিন্তা আমার মধ্যে বাসা বাঁধে। কি করব, কি হবে এমন হাজারও প্রশ্নের উত্তর পায়নি ওই সময়। এর মধ্যে অভাবের সংসার সবার থেকে একটু আলাদা চোখেই আমাকে দেখা হতো। পরে আমার বাবা দুইটি ছাগল কিনে দেন। সেই দুই ছাগল থেকেই আজ আমার ২২টি ছাগল।

তিনি বলেন, সমাজের প্রায় সব প্রতিবন্ধীই ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নেন, যেটা আমার পছন্দ না। এ পেশাকে কেন আমি গ্রহণ করব। প্রতিবন্ধীরাও চাইলে স্বাবলম্বী হতে পারে। নিজের চেষ্টা আর দৃঢ় প্রত্যয় আমাকে সুখ এনে দিয়েছে। আমি চাই অন্যরা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে উপার্জনে ফিরে আসুক।

আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চলতি বছর কোরবানির ঈদে ৫৫ হাজার টাকায় ৬টি ছাগল বিক্রি করেছি। এখনও ২২টি ছাগল আছে। এখনও কিছু বিক্রি করা যাবে। বছর শেষে নতুন করে আরও প্রায় ১২টি ছাগল আসবে।

শাকুল বলেন, গত বছর আমার স্ত্রীকে আমি চার হাজার টাকা দিয়ে একটা সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছি। সেখান থেকে সে মাসে তিন-চার হাজার টাকা আয় করে। আমার মেয়েকে আগামী বছর স্কুলে ভর্তি করাব। ইচ্ছা আছে মেয়েকে ডাক্তার (চিকিৎসক) বানানোর। আমার স্ত্রী, সন্তান নিয়ে আমি সুখে আছি, আগামীতেও সুখে থাকতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
ইএআর/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।