ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি সামরিক প্রস্তুতিও নিতে হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮
কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি সামরিক প্রস্তুতিও নিতে হবে

ঢাকা: রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একেবারে জীবন্ত আগ্নেয়গিরির ‍ওপর বসে থাকার মতো সংকট বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই সংকট সমাধানের জন্য যেমন দরকার সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, তেমনি দরকার সামরিক প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করা, যাতে মিয়ানমার সংকট সমাধানে আন্তরিকভাবে ভাবতে বাধ্য হয় এবং এভাবে প্রচেষ্টা চালালেই সংকট সমাধানে মিয়ানমার উদ্যোগী হবে।

শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর প্লানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) কনফারেন্স হলে এক তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এ মতামত দেন। ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী: বিদ্যমান অবস্থা ও পরিকল্পনা ভাবনা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিআইপি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক সেনাপ্রধান ও সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুন অর রশীদ, ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুল মান্নান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট তৈরির পর জাতিসংঘসহ বহির্বিশ্ব প্রথমে সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি। তারা কেবল মিয়ানমারের প্রতি নিন্দা জানানো ও এবং বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানোর মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনা অনুধাবন করেনি। এখন তারা সঠিক অবস্থায় আছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করা যাবে না মতামত দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যতো দ্রুত সম্ভব নিরাপত্তার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের মানসম্মত প্রত্যাবাসন দরকার। তা না হলে তারা নিজেদের কাজ করার স্পৃহা ও ক্ষমতা হারাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ আক্রান্ত হবে নানা জটিল সমস্যায়।

লে. জে. (অব.) হারুন অর রশীদ বলেন, জাতিসংঘের মাধ্যমে রাখাইনে শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়োগ করে একটি বাফার জোন তৈরি করতে হবে। তারপর রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠাতে হবে।

তিনি বলেন, এখানে (বাংলাদেশে) তাদের বেশি সুবিধা দিলে তারা এখান থেকে যেতে চাইবে না। কিন্তু দেশের স্বার্থে তাদের শতভাগ ফেরত পাঠাতে হবে।

আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক, তারা যে বাঙালি নয়, বিশ্বব্যাপী এটা প্রচারে মনোযোগ দিতে হবে। যুদ্ধ বা সামরিক উদ্যোগে এটা সমাধানের সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে বলে আমি মনে করি।

অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, জাতিসংঘ শুরু থেকে এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি। তবে তাদের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারা সঠিক পথে ফিরে এসেছে।

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, রোহিঙ্গারা মেডিকেল, রোগতত্ত্ব, জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাদের ১০ লাখ মানুষের মধ্যে যে পরিমাণ ই ও বি ভাইরাসের রোগী রয়েছে, ১৮ কোটি বাংলাদেশির মধ্যেও তা নেই। তাই বলা যায়, স্বাস্থ্য খাতেই এ সংকটে বাংলাদেশ জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছে।

রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে মিয়ানমারের দাবির বিষয়ে ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, ই ও বি ভাইরাস নির্ণয়ে আমরা একটি গবেষণা করে তাদের জিন পরীক্ষা করে দেখেছি, জিনগতভাবে তারা চীনাদের মতো। বাঙালিদের সঙ্গে তাদের কোনো মিল নেই।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের সামরিক প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা এটা থাকলেই কেবল তারা ভয় পাবে। অন্যদিকে চালিয়ে যেতে হবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী অধ্যাপক ড. তাসনিম শাকুর ও ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবু এই অনুষ্ঠান সমন্বয়ের কাজ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮
আরএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।