ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যমুনায় সর্বস্ব খোয়ানো রাবেয়াদের জীবন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
যমুনায় সর্বস্ব খোয়ানো রাবেয়াদের জীবন   গাছের ডালপালা ও পাতা শুকানোর কাজ করছেন তিন নারী। ছবি: বাংলানিউজ

যমুনা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঘুরে: প্রায় বছরখানেক আগের কথা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বতীর ঘেঁষে যমুনার অংশে বেশ কয়েকটি ইউক্যালিপটাস গাছের চারা লাগান রাবেয়া বেগমরা। সময়ের ব্যবধানে গাছগুলো তরতর করে বেড়েও ওঠে। কিন্তু বাঁধের পাশে বালু জমে গাছগুলোর অর্ধেক ঢেকে যায়। এ কারণে গাছগুলো কেটে ফেলতে বাধ্য হন তারা।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ঢেকুরিয়া গ্রামের বাঁধের অংশে সেই গাছের ডালপালা ও পাতা শুকানোর কাজ করছিলেন তিনজন নারী। তখন ছিলো ভর দুপুর।

উপর থেকে তপ্ত তাপ ঝরছিলো। তবে বাঁধের দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালার ছায়া এসে তাদের মাথার উপর কিছুটা ছাতার মতো কাজ করছিলো। এরপরও পুরো শরীরটা ঘামে ভিজে ছিলো একাকার।
 
কিন্তু যে যার মতো করে কাজ করেই চলছিলেন। একজন নারী কাড়াল (স্থানীয় ভাষায়) বাঁশের লম্বা লাঠি দিয়ে বাঁধের উপর বিছানো পাতাগুলো নেড়েচেড়ে দিচ্ছিলেন। আরেকজন নারী শুকনো পাতাগুলো পাজা করে নির্ধারিত স্থানে রাখার জন্য বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশে গাছের ফাঁকে আরেক নারী দাঁড়িয়ে দম নিচ্ছিলেন। পাশাপাশি গাছের ডালপালাগুলো বাঁধের একপাশে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
 
তাদেরই একজন রাবেয়া বেগম। স্বামী হবিবর রহমান। কাজীপুর উপজেলার কুনকুনিয়ায় ছিলো তাদের গ্রাম। অনেক বছর আগে যমুনা সেই গ্রাম গিলে খায়। এরপর ধীরে ধীরে স্থান পাল্টাতে থাকেন। পরপর পাঁচবার যমুনার ভাঙনের মুখে পড়ে এই পরিবারটি। সর্বস্ব হারিয়ে পরিবারটি বর্তমানে ঢেকুরিয়া এলাকায় বাঁধের পাশে ঘুপরি ঘর বানিয়ে বসবাস করছে।
 
পাতা শুকানোর ফাঁকে ফাঁকে রাবেয়া আলাপচারিতায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে বিয়ে করেছে। তার ঘরেও তিন সন্তান রয়েছে। সবাই একত্রে বসবাস করেন। ছেলে আবু বকর যখন যে কাজ পায় তাই করে। স্বামী হবিবর ঝাড় ফুক করে গ্রামে গ্রামে বেড়ায়। এভাবে যে আয় আসে তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলে তাদের জীবন’।
 
তিনি বলেন, ‘যতজমা কারো নাই। যে জাল্লা ছিলো নদীর মধ্যে রাইখা আইছি। কোনো কিছুই আর নাই। শুধু শরীরটা (জীবন) আছে। হাড়ভাঙা খাটুনি কইরা বাইচ্যা আছি। কোনো দিন তিন বেলা খাবার জোটে। আবার কোনো দিন না খেয়েও থাকতে হয়। এই হলো গরীবের জীবন। তবু ভর বছর চুলোতে আগুন দেওয়া যাইবো। তাই পাতা শুকাইয়া রাখত্যাছি। ’  

ছেলের বউ হুরিয়া বেগম বাংলানিউজকে জানান, শরীরটা ঠিক থাকলে এক বেলা হোক আর দু’বেলা দু’মুঠো যাই হোক খাবার জুটবে। সেটা তো রান্না করতে হবে। এজন্য জ্বালানির ব্যবস্থা তো থাকতে হয়। তাই গাছের ডালাপালা ও পাতা শুকিয়ে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজন মতো ভর বছর ব্যবহার করা যাবে।
 
পাশেই জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী ফিরোজা বেগম বাঁশের লম্বা লাঠি কাড়াল দিয়ে বিছানো পাতাগুলো নেড়েচেড়ে দিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপর বিরতি দিয়ে পাতাগুলো ওলট-পালট করে দিলে তা তাড়াতাড়ি শুকাবো। তিনিও ওই দুই নারীর মতোই যমুনার ভাঙনের শিকার হয়ে বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
এমবিএইচ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।