ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাতক্ষীরায় ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
সাতক্ষীরায় ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা শুরু গুড়পুকুরের মেলার দোকান। ছবি: বাংলানিউজ

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় মাসব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মেলার উদ্বোধন করেন। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শাহ আব্দুল সাদী, সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোৎছ্না আরা, পৌর কাউন্সিলর কাজী ফিরোজ হাসান, শফিক-উদ-দৌলা সাগর, ফারহা দিবা খান সাথী প্রমুখ।  

এদিকে, মেলা উপলক্ষে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক সেজেছে নতুন সাজে।

মনোহারি, বাচ্চাদের খেলনা, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দোকানে সেজেছে মেলা। এছাড়া মেলায় এসেছে নাগরদোলা, ট্রেন, ভাসমান ড্যান্সিং বোটসহ শিশুদের বিনোদনের নানা রকম রাইড।  

যদিও এ বছর মেলা উদ্বোধনের কথা ছিল ১৬ সেপ্টেম্বর। কিন্তু পরে আয়োজক কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ২১ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের ঘোষণা দেয়।  

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের মেলা নিয়ে নানা রকম জনশ্রুতি আছে। কেউ বলে, মোগল আমলে একজন রাজকর্মচারী আজকের সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের মনসাতলায় (বটবৃক্ষতলে) বিশ্রাম নিতে গিয়ে তন্দ্রাছন্ন হয়ে পড়েন। দিনটি ছিল বাংলা সনের ৩১ ভাদ্র। হঠাৎ তিনি জেগে দেখেন, একেবারে কাছেই একটি সাপ ফণা তুলে তাকে ছায়া দিচ্ছে। সেই থেকে তিনি ওই বটতলায় সাপের দেবী মনসার উদ্দেশে পূজা শুরু করেন এবং অন্যদেরও মনসা পূজা করতে বলেন। এ পূজার প্রসাদ পুকুরে ফেলে দেয়ায় এর পানি মিষ্টি হয়ে যায়। এ কারণে ওই পুকুরের নাম হয়ে যায় গুড়পুকুর।

অন্যরা বলেন, পুকুরে বেশি দিন পানি থাকত না শুকিয়ে যেত। পরে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে স্থানীয়রা সেখানে ১০০ ভাড় গুড় ঢেলে দিলে পুকুরে পানি ওঠে, তাই এমন নামকরণ। আবার শোনা যায়, আশপাশের খেজুর গাছের রস থেকে গুড় তৈরির পর তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থেই পুকুরটি খনন করা হয়েছিল।

আরেকটি মত রয়েছে, গৌর বর্ণের ব্রাহ্মণরা পুকুরটির মালিক ছিলেন। এ থেকেই গৌরদের পুকুর। কালক্রমে বিবর্তনের ধারায় গুড়পুকুর হয়েছে।

নামের শানে-নজুল যা-ই হোক, পুকুরের নামেই মেলা হয়ে আসছে কয়েক শতাব্দী ধরে। সম্ভবত দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথমদিক থেকে হয়ে আসছে মনসা ও বিশ্বকর্মা পূজাও। এলাকার অনেকেই বলেন, ওই দুই পূজা ঘিরেই মূলত গুড়পুকুর মেলা। যা সাতক্ষীরার সবচেয়ে বড় সামাজিক ও লোকজ উৎসব।

তবে, ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুড়পুকরের মেলায় আগত সার্কাস এবং সাতক্ষীরা শহরের রকসি সিনেমা হলে বোমা হামলায় কয়েকজন হতাহতের ঘটনায় বেশ কয়েকবছর বন্ধ ছিল মেলা। তখন সাতক্ষীরা শহরজুড়ে বসতো এই মেলা। দীর্ঘ বিরতির পর আবার শুরু হলেও তা এখন সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।