ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

প্রশাসনে পদোন্নতি আসছে, আশাহত অন্য ক্যাডাররা

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
প্রশাসনে পদোন্নতি আসছে, আশাহত অন্য ক্যাডাররা

ঢাকা: প্রশাসনে এবার উপসচিব থেকে যুগ্ম-সচিবের পদে পদোন্নতি হতে যাচ্ছে। সচিবালয়ে গুঞ্জন চলছে, পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই প্রাধান্য পাচ্ছেন। তবে বরাবরের মতো এবারো বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে নিয়ম বর্হিভূতভাবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বঞ্চিতদের। আর এ নিয়ে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।



জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, বিসিএস ১৫তম ও ১৭তম ব্যাচের উপ-সচিবদের মধ্য থেকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে। পদোন্নতির সার-সংক্ষেপ তৈরি করে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন দিলে খুব শিগগিরই উপ-সচিবের পদে পদোন্নতির আদেশ জারি হতে পারে।

পদোন্নতি নিয়ে জনপ্রশাসনের এপিডি অনুবিভাগে খোঁজ-খবর নিতে কর্মকর্তাদের ভিড়ও দেখা যায় প্রতিদিন। তবে বৃহস্পতিবার এ বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব শেখ ইউসুফ হারুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা যায়নি।

‘সরকারের উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা-২০০২’ অনুযায়ী উপ-সচিব থেকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ১৫ বছরের মোট চাকরিসহ ফিডার পদে পাঁচ বছর এবং অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ২০ বছরের মোট চাকরিসহ ফিডার পদে তিন বছরের চাকরি প্রয়োজন।

সম্প্রতি নবম ব্যাচের কর্মকর্তারা জনপ্রশাসনে আবেদন দিয়ে তাদের বঞ্চনার কথা জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, আমরা নবম ব্যাচের কর্মচারীরা ২০ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মচারীদের সঙ্গে উপ-সচিব পদে ২০১৫ সালে যোগদান করি। আমাদের সবার যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ হলেও ২০তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের উপ-সচিবদের এসব শর্ত পূরণ হতে আরো দু’বছর সময় লাগবে। ১১তম ব্যাচ জুনিয়র কর্মচারীদের পদোন্নতির যোগ্যতা শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণে নবম ব্যাচের পদোন্নতির আরও দু’বছর দেরি করানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের আর ২-৪ বছর চাকরি অবশিষ্ট আছে, ২০তম ব্যাচের উপ-সচিবদের আরও ১২-১৫ বছর চাকরি আছে। এভাবে নিয়ম না মানা হলে আমাদের অনেককেই হয়তো উপ-সচিব হিসেবে চাকরি শেষ করতে হবে, আর যুগ্ম-সচিব হলেও পরবর্তী পদোন্নতির কোনো সুযোগ থাকবে না।

তিনি বলেন, অনিয়ম চালু থাকলে নবম ব্যাচের একজন যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মচারী হয়েও ১০ম থেকে ১৮তম ব্যাচের জুনিয়রদের অধীনে চাকরি করতে হবে, যা জ্যেষ্ঠতার চরম অবমাননা ও প্রচলিত সব নিয়মের পরিপন্থি।

তাদের শঙ্কা এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব বা সচিব পদে অন্যান্য ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকেই আর পাওয়া যাবে না, যা বিদ্যমান পদোন্নতি নীতিমালার মূলভিত্তি ‘মেধা, যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতা’র অবমূল্যায়নই বটে।

অপর এক কর্মকর্তা বলেন, তারা পদোন্নতির সব শর্তই পূরণ করেছেন। কিস্তু পদোন্নতিতে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। অথচ তাদের সময়কার প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এক থেকে দেড় বছর আগেই পদোন্নতি পেয়ে কেউ কেউ যুগ্ম-সচিব হয়েছেন।

১১তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, তার চাকরির ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। যোগ্যতা লাগে ২০ বছর। কিন্তু তার পদোন্নতি হয়নি। অথচ তার সঙ্গে যোগ দেওয়া প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়েছেন আগেই।

তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ১০ম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে। অথচ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি অন্যান্য ক্যাডারের ‌একজনকেও।

দীর্ঘদিন বঞ্চিত হওয়া নাম প্রকাশ না করে এক কর্মকর্তা বলেন, পদোন্নতি না হওয়ায় পারিবারিক, সামাজিক ও দাফতরিকভাবে তারা মর্যাদার সংকটে ভুগছেন। এতে করে মানসিক যন্ত্রণার পাশাপাশি কর্মদক্ষতা কমছে এবং সৃজনশীলতা নষ্ট হচ্ছে।  

অন্য ক্যাডারের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, ১১তম, ১৩তম, ১৫তম, ১৭তম ও ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

বর্তমানে যুগ্ম-সচিবের নিয়মিত ৪৩০ পদের বিপরীতে আছেন ৬১৮ জন। আবারো পদোন্নতি দিলে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। আর এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয় প্রশাসনে।  

পদোন্নতির বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮ 
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।