ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৭ কি.মি. বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ৪ বার বিলীন যমুনায়

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
৭ কি.মি. বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ৪ বার বিলীন যমুনায় .

যমুনা ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঘুরে: ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৩ সাল। এরমধ্যে কেটে গেছে দীর্ঘ ১৯ বছর। এ সময়ের মধ্যে পরপর চারবার যমুনাগর্ভে বিলীন হয়েছে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এতে যমুনা  গিলেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বিলিন হয়েছে বিপুল সংখ্যক বসতভিটা এবং প্রায় ২০ হাজারের অধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছে।  

পঞ্চমবারে নির্মিত বাঁধটি এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। অবশ্য গেলো বন্যায় বাঁধটি কয়েকদফা ভাঙনের মুখে পড়েছে।

তবে শেষ অবধি রক্ষা পেয়েছে বাঁধটি। এখনো অনেক ক্ষত চিহ্ন রয়েছে বাঁধটির বুকে। কিন্তু এবারও যমুনার বুক পানিতে ফুলে উঠছে।
 
গত এক সপ্তাহ ধরে যমুনার পানি ক্রমেই বেড়ে চলছে। বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলা পয়েন্টে যমুনার পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাঁধের পূর্বে যমুনার অংশে পানি এসে ভরে গেছে।  
 
সাত কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অবস্থান বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে। বাঁধের দক্ষিণে মাধবডাঙা আর উত্তরে উত্তর সহড়াবাড়ী গ্রাম। মাঝখানে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি গ্রাম।
 
বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল, ভান্ডারবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান, লুলু মণ্ডল, সোনার উদ্দিন, দুলু সেখসহ বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি আলাপকালে বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।
 
ভান্ডারবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান বাংলানিউজকে জানান, এই গ্রামে তছিমুদ্দিন তালুকদার নামে এক প্রতাপশালী লোকের বসবাস ছিল। তৎকালীন পাকিস্থান সরকারের উচ্চ পদস্থ জনপ্রতিনিধিও ছিলেন তিনি। তার প্রায় ১২শ’ বিঘার মতো জমি ছিল। বর্তমানে মাত্র ৫০ বিঘার মতো জমি অবশিষ্ট রয়েছে। তাও কখন যমুনার গর্ভে চলে যাবে। সেসব জমি বর্তমানে তার নাতিপুতির ভোগ দখল রয়েছে।
 
ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল এসব তথ্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে আরও জানান, ১৯৬৬ সালে আইয়ুব খানের আমলে যমুনার ভাঙনরোধে ভান্ডারবাড়ী গ্রাম থেকে পূর্বে নিউসারিয়াকান্দি গ্রাম হয়ে সাত কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সেই বাঁধ ১৯৮৪ সালে প্রথম ভেঙে যায়। পরবর্তী দ্বিতীয় দফায় ১৯৮৮ সালে পশ্চিম এসে আবারও নির্মাণ করা হয় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। যমুনার পানি তোড়ে সেটিও ভেঙে যায়।
 
এরপর ১৯৯৭ সালে তৃতীয়বারের মতো বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এটি ভেঙে যায় ২০০৩ সালে। একইবছর  ভান্ডারবাড়ী গ্রাম হয়ে পঞ্চমবারের মতো সাত কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যা এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে আর কতোদিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে সেটি সময়ই বলে দেবে। টাকা মূল্যায়নের দিক দিয়ে হিসাব করলে চারদফা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পেছনে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা যমুনার পেটে চলে গেছে বলেও মত দেন এ জনপ্রতিনিধি।
 
তিনি আরও জানান, ১৯৮৪ সালে এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৮ হাজার। বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজারের মতো। পরপর  বাঁধ ভাঙনের কারণে বৈশাখী, বথুয়াভিটা, রাধানগর, পুকুরিয়া, নিউসারিয়াকান্দি, বড়ইতলী, কচুগাড়ী, সহড়াবাড়ী, ভান্ডারবাড়ী, আটারচর, শিমুলসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরো-আংশিক যমুনার গর্ভে হারিয়ে গেছে।
 
লুলু মণ্ডল, সোনার উদ্দিন, দুলু সেখ বাংলানিউজকে জানান, তারা একাধিকবার যমুনার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। জমি-জমাসহ বসতভিটা হারিয়েছেন। আবার নতুন স্থানে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়েছেন। এভাবে ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে চলছে তাদের জীবনকাল। এরই মধ্যে আবারও যমুনার পানি বাড়া শুরু হয়েছে। এবার যে কি হয় তা দেখতে সামনের দিনই বলে দেবে বলেও জানান এসব প্রবীণ ব্যক্তিরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
এমবিএইচ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad