ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস সংসদ অধিবেশন

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: সাংবাদিক মহল ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের আলোচনার মধ্যেই বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রেখে জাতীয় সংসদে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ পাস হয়েছে।

বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।

কিন্তু তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

বিলটি পাসের আগে আপত্তি তুলে জাতীয় পার্টি দলীয় এমপি ফখরুল ইমাম বলেন, বিলে স্টেকহোল্ডারদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতার জন্য এটা উদ্বেগজনক। এটা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিল। গণমাধ্যমের উদ্বেগ ও মতামত উপেক্ষা করায় স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধার সৃষ্টি করবে। দেশে সুশাসনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো এই বিলের কারণে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

জাতীয় পার্টির আরেক এমপি নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিলে গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি।  

নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী বলেন, বিলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন।  

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমি এ কমিটির একজন সদস্য। বিলটি নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এটা নিয়ে অনেক যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তাই আমি আমার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। একইসঙ্গে বিলটি পাস করা যেতে পারে বলে আমি মনে করি। প্রস্তাব দেওয়া অন্যান্য এমপিরা তাদের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই-বাছাই প্রসঙ্গে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিলটি পাসের জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রক্ষার জন্য ডিজিটাল আইন আমরা সবার আগে তৈরি করছি। পৃথিবীর বহু দেশকে এই আইনটি অনুসরণ করতে হবে।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এটা ঐতিহাসিক আইন। ভবিষতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ হবে না। যুদ্ধ হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। তাই কোনভাবে আমরা রাষ্ট্রকে বিপন্ন হতে দিতে পারি না।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য এই আইন নয়। মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা যেন না থাকে তাই এই আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, বিলটি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কী পরিমাণ আলোচনা করেছি, তাদের কথা শুনেছি তা এই বিলের রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যাবে। আমরা তাদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। তারা যেসব জায়গায় যে ধরনের সংশোধনী দেয়া দরকার সেই অনুসারে সবকিছু আমরা করেছি। সাংবাদিকরা আইনমন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির কাছে যেসব কথা বলেছেন তা হয়তো তারা ভুলে গেছেন। যদি তারা ভুলে না গিয়ে থাকেন তাহলে তাদের সমালোচনার অবস্থা থাকে না। আইনটিকে বিতর্কিত করার কোনো সুযোগ নেই। ২০১৫ সাল থেকে বিলটি সর্বস্তরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

ফখরুল ইমামের ৪৩ ধারার সংশোধনী প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মহাপরিচালকের অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি বাদ দেওয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি সবাই বিষয়টি না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।  

আইনটি পাস হওয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়বে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আগে থেকেই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ এরই মধ্যে আইনটি প্রত্যাখ্যান করেছে। সাংবাদিক ইউনিয়নও আইনটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। আইনে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অন্তর্ভুক্ত করে এর পরিধি আরো বাড়ানো হয়েছে।

ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ ওই অ্যাক্ট ভঙ্গ করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার সাজা হবে। আইনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে।  

গত ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। তখন থেকেই আইনটি নিয়ে আপত্তি ওঠে। সম্পাদক পরিষদ এই আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানায়। এছাড়া ১০টি পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা আইনের ২১, ২৮, ৩২ ও ২৫ ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।  

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। কমিটি প্রতিবেদন দিতে তৃতীয় দফায় ১১ সেপ্টেম্বর এক মাসের সময় নিয়েছিল। ১৭ সেপ্টেম্বর তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপন করে। ওই প্রতিবেদনে অংশগ্রহণকারীদের মতামতের তেমন কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।

গত ৯ এপ্রিল ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি খসড়া আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
এসএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad