ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২০২০ সালের মধ্যে সব ইট ভাটা বন্ধ করা উচিত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
২০২০ সালের মধ্যে সব ইট ভাটা বন্ধ করা উচিত পোড়া ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক’ শীর্ষক সেমিনারে গৃহায়ন মন্ত্রী/ছবি: শাকিল

ঢাকা: পরিবেশ ও স্থায়ীত্বের কথা বিবেচনা করে রাস্তা নির্মাণে ইটের খোয়ার ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে বলব রাস্তা নির্মাণে ইটের খোয়ার ব্যবহার বন্ধ করুন। ইটের খোয়ার পরিবর্তে পাথরের খোয়া ব্যবহার করুন।

বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পোড়া ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাংবাদিক অমিতশ পাল।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন প্রকৌশলী ম ইনামুল হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান প্রমুখ।

সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ রেডিমিক অ্যান্ড কংক্রিট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আব্দুল আউয়াল।

গৃহায়ন মন্ত্রী বলেন, ইটের খোয়ায় নির্মিত রাস্তার স্থায়ীত্ব অনেক কম। কোথাও ইটের খোয়া দিয়ে রাস্তা করলে দেখা যায় ৬ মাসের মধ্যে সেগুলো গলে যাচ্ছে অথবা গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। আর কংক্রিটের ব্লক দিয়ে রাস্তা করলে তার স্থায়ীত্ব দীর্ঘদিন হয়। তাই ইটের খোয়ার পরিবর্তে পাথরের চিপস দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে যেহেতু পাথরের স্বল্পতা রয়েছে তাই পাথর আমদানির ওপর শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। মানুষকে পাথর ব্যবহার উৎসাহিত করতে হলে অবশ্যই শুল্ক কমাতে হবে। অন্যথায় মানুষ পাথর ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে।

পরিবেশ রক্ষায় আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ইটভাটা তুলে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, আমিও টপ সয়েল ব্যবহারের বিপক্ষে। জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করে যেভাবে ইট তৈরি করা হচ্ছে তাতে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই ইট ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে ইট ভাটার উপর বেশি বেশি কর আরোপ করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সমস্ত ইট ভাটা বন্ধ করা উচিত। ইটের পরিবর্তে হলগ্রাম বা কংক্রিটের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

মন্ত্রী দশ বছরের জন্য ব্লক তৈরি কারখানাকে শুল্কমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি ইটের ব্যবহার বন্ধ করে ব্লক বা কংক্রিটের ব্যবহার বাড়াতে হয় তাহলে দশ বছরের জন্য সমস্ত ব্লক তৈরি কারখানার ওপর ডিউটি ফ্রি করতে হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল। মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়- দেশে এখন বছরে কম করে হলেও ১৭ দশমিক ২ বিলিয়ন পিস ইট তৈরি হচ্ছে। প্রতি মিলিয়ন ইট তৈরিতে পোড়াতে হচ্ছে ২৪০ মিলিয়ন টন কয়লা। কয়লার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে বনভূমি ধ্বংস করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও বাঁশ। ইট ভাটাগুলো থেকে বছরে কম করে হলেও ৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে বায়ুমন্ডল। যা দেশের মোট কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রায় ২৩ শতাংশ। সঙ্গে যোগ হচ্ছে কার্বন মনোঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে বাতাসে ৪০ ভাগ ক্ষুদ্র কণা আসে ঢাকার চারপাশের ইটভাটার মাধ্যমে। আর প্রতিবছর ঢাকার চারপাশের ইটভাটার মাধ্যমে ১৫ হাজার ৫০০ টন সালফার ডাই-অক্সাইড, ৩ লাখ ২ হাজার টন কার্বন মনো-অক্সাইড, ৬ হাজার টন ব্ল্যাক-কার্বন, ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। প্রতি বছর ইট উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে ২৮৪ কোটি ঘুনফুট মাটি, যার পুরোটাই আসছে জমির উপরি ভাগ থেকে।

ইটভাটার কারণে প্রতিবছর আবাদি জমি ধ্বংস হচ্ছে। ভূমি রেকর্ড ও জরিম অধিদফতরের তথ্য মতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ একর। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ১৯৮৪ সালে দেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ২ লাখ ৩৮ হাজার একর। ১৯৯৭ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার একরে। সবশেষ ২০১২ সালে বাংলাদেশে আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫৪ হাজার একরে। এভাবে প্রতি বছরই আবাদি জমি হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
এসএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।