ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাথায় হাত বুলিয়ে পোশাককর্মীদের বেতন বাড়ান প্রধানমন্ত্রী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
মাথায় হাত বুলিয়ে পোশাককর্মীদের বেতন বাড়ান প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: মালিক-শ্রমিকদের দ্বিমতে দীর্ঘ সূত্রিতায় আটকে যাওয়া পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যস্ততায় চূড়ান্ত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বোর্ডের কয়েকজন সদস্য।

এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ছোট বাচ্চার মতো পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে আট হাজার ন্যূনতম মজুরিতে রাজি করিয়েছেন বলে জানান শ্রমিক প্রতিনিধি শামসুন্নাহার ভূঁইয়া।

বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নতুন মজুরি ঘোষণা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।

সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শ্রমিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার বলেন, মালিক পক্ষ ৬ হাজার এবং আমাদের পক্ষ থেকে ১২ হাজার ২০ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এই অচলাবস্থার মধ্যে অনেক দিন কেটে গেছে।
 
তিনি বলেন, “আমি দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্টকে মাথায় হাত দিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বলছিলেন- এটা মেনে নাও ছোট ভাই, এ রকম করে বলতেছেন। আমাকেও বলতেছে তুমি মন খারাপ করো না, আমি জানি তুমি খুব সন্তুষ্ট হতে পার নাই। মন খারাপ করো না, উপায় নাই। আমার সবারই দেখতে হয়। ”

“প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালিকরাও আমাদের, এই প্রতিষ্ঠানে ৪০ লক্ষ মানুষ এখানে কাজ করে। এখনও আমাদের অনেক শিক্ষিত যুবক বেকার আছে আমি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি নাই। আমাকে বাঁচতে দাও, আমার সরকার আরেকবার আসুক। একশ’ ইকোনমিক জোনের কথা উনি বললেন, সেটা যদি চালু করতে পারি আমার দেশের মানুষ আর বেকার থাকবে না। তখন মজুরি…। এই কথাটা উনি বললেন, আমার খুব ভাল লাগছে। বললো এখনও বিএ পাস, এমএ পাস, ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করা অনেক ছেলে বেকার আছে। যাহোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ৮ হাজার টাকা, আমরা মেনে নিয়েছি। ”

নতুন ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রার জন্য অপর্যাপ্ত হলেও মেনে নিয়েছেন বলে জানান শামসুন্নাহার।

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির ইতিহাস তুলে ধরে শামসুন্নাহার বলেন, যখন দুটি কারখানা নিয়ে শুরু হয় তখন ৫৭০ টাকা ছিল ন্যূনতম মজুরি। তারপরে ৯৩০ টাকা, ২০০৬ সালে ছিল ১৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা। ২০১৩ সালে ন্যূনতম ছিল তিন হাজার টাকা।

মালিক পক্ষের সদস্য ও বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ছয় হাজার ৩৫০ টাকা এবং শ্রমিক পক্ষ ১২ হাজার ২০ টাকা প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা ন্যুনতম সাত হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হই। শ্রমিক প্রতিনিধিরা ১২ হাজার টাকায় থাকে। তখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ওনার নির্দেশনায় আমরা আট হাজার টাকা দিতে রাজি হই। আমরা দুই পক্ষ এক সাথে ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন শ্রমিক বান্ধব।
 
মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা দুই পক্ষের প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু একটা পর্যায়ে আমরা থেমে গিয়েছিলাম, মালিকরা কোনো ক্রমেই সাত হাজার টাকার ওপরে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। বোর্ড সভায় মালিক এবং শ্রমিকরা বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতে চেয়েছিল, আমরা সুযোগ দিয়েছিলাম। ওনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছেন। সেখানে আরও এক হাজার টাকা বেড়েছে। আমরাও সবাই সম্মতভাবে মনে করেছি ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা যুক্তিযুক্ত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে ক্ষমতায় এসে তিন হাজার ৩০০ টাকা এবং তিন বছর পরে ২০১৩ সালে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা বৃদ্ধি করেন জানিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রম আইনে আছে প্রতি পাঁচ বছর পর পর মজুরির বিষয়টি সামঞ্জস্য করা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নাই যে একটা সেক্টরে তিন বছরের মধ্যে দুইবার মজুরি কাঠামো ঘোষণা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শ্রমবান্ধব। তিনি শ্রকিদের বিষয়ে খুব সহানুভূতিশীল।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
এমআইএইচ/এমইউএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।