ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মানুষের সেবায় চিকিৎসকরা নিজেদের উৎসর্গ করুন 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
মানুষের সেবায় চিকিৎসকরা নিজেদের উৎসর্গ করুন 

ঢাকা: দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, চিকিৎসক সমাজকে গ্রামের মানুষের চিকিৎসায় আরও বেশি আত্মনিয়োগ করতে হবে। ডাক্তারদের গ্রামে থাকতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, খেটে-খাওয়া মানুষের পরিশ্রমেই অপনাদের বেতন-ভাতা হয়। তাই তাদের প্রতি আপনাদের আরও আন্তরিক হতে হবে। রোগীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। আপনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে সাধারণ মানুষ সহজেই চিকিৎসাসেবা পাবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও কনভেনশন সেন্টার, ডায়াগনস্টিক ও অনকোলজি ভবন এবং ডক্টরস’ ডরমেটরি উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের উত্তর পাশে এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ১১ তলা ভবন নির্মিত হবে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হবে। এখানে সব ধরনের গবেষণা উপযোগী আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। যেসব মেডিক্যাল টেস্টের জন্য বিদেশে যেতে হয়, এটি চালু হলে আর বিদেশে যেতে হবে না। চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আরও গতিশীল ও উন্নত হবে। বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে বলে আমি মনে করি। এ স্পেশালাইজড হাসপাতালটি রোগীবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে গড়ে উঠবে। আমি আশা করি, হাসপাতালটি চিকিৎসা ও গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও গবেষণা কার্যক্রমের গুণগত মান উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টার জন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদের প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করবেন; সেই আহবান জানাই। আপনাদের আরও গবেষণার প্রতি জোর দিতে হবে। মানুষের যেন রোগ না হয় সে ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। আমরা সবধরনের সহযোগিতা করবো। সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীদের প্রতি আমি অনুরোধ করবো জনগণের চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিজেদের উৎসর্গ করবেন। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক সময় উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। আবার অনেকেই দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করেন। এ অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। আমি চাই আমাদের দেশের সকল মানুষ দেশেই উন্নত চিকিৎসা পাবেন। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।

মেডিক্যাল কলেজগুলোর পড়াশোনার ব্যাপারে নজরদারি রাখার বিষয়টি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, প্রাইভেট বহু মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে, সেগুলোতে আদৌ পড়াশোনা হচ্ছে কি-না? কী পড়াশোনা হচ্ছে? সত্যিকারের ডাক্তার তৈরি হচ্ছে নাকি রোগী মারার ডাক্তার হচ্ছে, সেটাও আমাদের দেখা দরকার। একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পারবে এ বিষয়ে নজরদারি রাখতে, যাতে সব প্রতিষ্ঠান মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হয়। সে ব্যবস্থা আমরা করতে চাই, চিকিৎসাসেবার মান উন্নত করতে চাই।
 
প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের লক্ষ্য আছে পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রতিটি প্রতিটি বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া হবে। আগামীতে ক্ষমতায় এলে তা করে দেবে আওয়ামী লীগ সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজশাহীতে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। রাজশাহী, রংপুর সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ আছে, সেগুলোকে এর অধিভুক্ত হতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোর যতো সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ আছে, সেগুলোও এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকবে। ঠিক তেমনি সিলেটে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে এবং সেখানকার মেডিক্যাল কলেজগুলো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকবে। এতে পড়াশোনার মান বোঝা যাবে।

তিনি চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছিলাম, তখন আমি আলাদা একটি ফান্ড করে দিয়েছি, ফান্ডে যে টাকা জমা থাকবে, তার ইন্টারেস্ট দিয়ে সাধারণ মানুষ দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এই ফান্ডে আমি আরও ১০ কোটি টাকা দেবো।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি ৭.৭৮ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫২ ডলার। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। মেট্রোরেলের কাজ পুরোদমে চলছে। আমরা ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এ অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।

‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। ’

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠান মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জি. এম. সালেহ উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
এমইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।