ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাক্ষুসে পদ্মার রুদ্ররূপ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
রাক্ষুসে পদ্মার রুদ্ররূপ ভাঙনে নড়িয়ায় হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন

নড়িয়া, শরীয়তপুর থেকে ফিরে: শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলা। এ উপজেলার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা পদ্মানদী রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। গত দুই মাস ধরে একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে মানুষের বতসভিটা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, হাসপাতালসহ রাস্তাঘাট।

হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুন। চোখের পলকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভূমি।

ভিটেমাটি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে পদ্মার পাড়ে বসে থাকা ছাড়া আর যেন কিছুই নেই এ এলাকায় মানুষের। নিমিষেই বাপ-দাদার বসত ভিটে, আশ্রয়ের শেষ সম্বলটুকু পদ্মার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। অথচ কিছুই করার নেই! এ ‘কিছুই করতে না পারার’ অসহায়ত্বে কান্নায় ভেঙে পড়ছে  নড়িয়ার ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ!

নড়িয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাশেদা বেগম। স্বামী পরিত্যাক্তা রাশেদা বেগম অনেক দিন ধরেই বাবার সঙ্গে থাকেন। মা মারা গেছেন অনেক আগেই। বাবা তার অসুস্থ এক দিনমুজুর। রাশেদা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পদ্মার ভাঙনে তার বাবার শেষ সম্বল মাথা গোঁজার জায়গাটুকু বিলীন হয়ে গেছে গত দু’দিন হলো। ভিটেমাটির সামান্য অংশটুকু এখনো রয়ে গেছে নদীর পাড়ে। গত দু’দিন ধরে সেই স্থানটুকুতে বসে কেঁদে চলেছেন তিনি।

গত দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুন

নড়িয়া পৌরসভার পূর্ব নড়িয়ার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাশেদা বেগমকে বসে থাকতে দেখা গেছে নদীর পাড়ে। যে স্থানে তিনি বসে ছিলেন তার সামনেই ছিল তাদের ঘর। যা এখন পদ্মার গভীরে। উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকা রাশেদা বেগমের কাছে কিছু জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মার এই ভয়ালরূপ জীবনে দেখেনি। একদিনের মধ্যে বাড়িঘর সব নদীতে চলে গেছে। আমাদের সহায়সম্বল আর কিছুই রইলো না। আমরা গরীব মানুষ। অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাই। যেসব বাড়িতে কাজ করতাম, তাদেরও ঘরবাড়ি সব ভেঙে গেছে।

পূর্ব নড়িয়া এলাকার বাসিন্দা হাসিনা বেগম। তার স্বামী বাজারে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। সহায়-সম্বল বলতে শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুই। তাও তিনদিন ধরে পদ্মায় ভেঙে গেছে।  

তিনি বলেন, একের পর এক ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। আমরা নিরুপায় হয়ে শুধু পদ্মার দিকে চেয়ে থাকি, আর আল্লাহকে ডাকি। কেউ আমাদের পাশে নাই। আমরা এখন রাস্তার মানুষ হয়ে গেছি। ঠিকমত তিনবেলা খাবার নাই, চোখে ঘুম নাই। নিজেকে এতোবেশি অসহায় মনে হয়নি এর আগে।

ওই এলাকার অপর বাসিন্দা নাসিমা বেগম। গত সপ্তাহে তাদের ঘরবাড়িসহ জায়গাজমি যতটুকু ছিল সবই এখন পদ্মায় বিলীন। সামান্যটুকু জায়গা জমিও অবশিষ্ট নেই। নদীর পাড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু বসে থেকে বিলাপ করা ছাড়া কিছুই নেই তার।

ক্ষোভের সঙ্গে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলতেছে। এই ব্যাগে কিছুই হবে না। স্রোতের টানেই ব্যাগ ভাইস্যা যায়। আমরা এখন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক মানুষ রাস্তায় থাকছে। কেউ দেখার নাই আমাদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নড়িয়া উপজেলার পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখন নদীগর্ভে। বাজার, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও কয়েকশত ঘরবাড়ি পদ্মা নদীতে গত এক সপ্তাহে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বাজারসহ উপজেলা চত্বরের একাধিক ভবন।

ইতোমধ্যে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে, নড়িয়া উপজেলার মূলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সাধুর বাজার লঞ্চঘাট, নড়িয়া-মূলফৎগঞ্জ সড়ক, পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেদারপুর, বাশতলা, চরজুজিরা, সেহের আলী মাদবরকান্দি গ্রাম, দাসপাড়া, পাঁচগাঁও গ্রাম, শুভগ্রাম, ওয়াপদা লঞ্চঘাট, উত্তর কেদারপুর রামঠাকুরের সেবামন্দির, চন্ডিপুরলঞ্চঘাট, ঈশ্বরকাঠি এলাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।