ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশ কতো অসহায়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
পুলিশ কতো অসহায়! ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রংপুর অঞ্চলের একটি আঞ্চলিক প্রবাদ রয়েছে, ‘টাকায় করে কাম, মর্দের (পুরুষ) হয় নাম।’ আজ সেই কথাটি আরেকবার হাতে নাতে প্রমাণ পেলাম। পুলিশের গাড়িকেও সাইড দিলেন না অবৈধ দোকানি।

তখন বেলা ১১টা, দুপুরে রাষ্ট্রপতি আসবেন সোনারগাঁও হোটেলের একটি অনুষ্ঠানে। তাই একটি বড় বাসে করে বেশ কয়েকজন পুলিশ এসে নামলেন কারওয়ান বাজার বিটিএমসি ভবনের সামনে।

পুলিশ সদস্যরা নেমে গেলে বাসটি রাখা নিয়ে জটিলতা দেখা দিলো।

পুলিশ বাসটি রাখতে চাইলেন বিটিএমসি ভবনের সামনের রাস্তায় (কারওয়ান বাজারে প্রবেশ পথ)। কিন্তু সেখানে রাস্তায় বেশ কয়েকজন ডাব বিক্রেতা ও চায়ের দোকান। বাসটি যখন পেছনের দিকে ধীরে ধীরে আসছিলেন পার্কিং করার জন্য। তখন ড্রাইভারকে সহায়তা করছিলো পুলিশের একজন অফিসার। বাসের পেছনের অংশ ডাবের দু’টি খাচির মধ্যে একটি ঢেকে নিয়েছে আরেকটির উপর উঠে ভাব। কিন্তু ডাব বিক্রেতার কোনো নড়চড় নেই।
 
পুলিশকর্তা এসে বললেন ওই মিয়া সরতে পারো না। পুলিশকর্তার কথা যেনো কানেই গেলো না এমন ভাব দেখালেন ডাব বিক্রেতা। মাথা নিচু করে টুলে বসেই থাকলেন। আরেকজন পুলিশ অফিসার এসে তাকে অনুরোধ করলেন একটু সরে গিয়ে বাসটি রাখার জায়গা করে দেওয়ার জন্য।
 
কয়েকবার বলার পর মাত্র হাত দুয়েক সরে আসলেন ডাব বিক্রেতা। তারপর খানিকটা এফডিসিমুখী রাস্তার উপর কিছুটা ভেতরের রাস্তায় রেখে পার্ক করলেন বাসটি। এই যখন দেখছিলাম তখন ভাবনার মধ্যে ঢুকে পড়ে রাস্তা বন্ধ করে বসা দোকানির খুটির জোর কোথায়! পুলিশের গাড়িকেও সামান্য ছাড় দিলো না।
তেজগাঁও থানার চাঁদা আদায়কারি আলমগীর হোসেন।  ছবি: রাজিন চৌধুরীডাব বিক্রেতার কাছে গিয়ে জানার চেষ্টা করলাম। কিছুটা ব্যঙ্গ করেই বললাম আপনারতো ভাই দারুণ ক্ষমতা পুলিশকেও পাত্তা দিলেন না। ডাব বিক্রেতা কিছুটা ক্ষিপ্ত ছিলেন পুলিশের আচরণে। এবার রাখঢাক ছাড়াই বললেন, এই দু’টি খাচি রাখার জন্য দিনে সাড়ে ৩’শ টাকা, আর মাসে সাড়ে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। অনেক দোকান আছে এতো ভাড়া দিতে হয় না। জায়গা ছেড়ে দিলে তাদের টাকা দিবো কোথা থেকে।
 
আরও কয়েক মিনিট কথা হলো তার সঙ্গে। পুলিশের চারটি গ্রুপকে দৈনিক ভিত্তিতে টাকা দিতে হয়। এরমধ্যে তেজগাঁও থানা ৪০ টাকা, একটি গ্রুপকে ৩০ টাকা, অপর দু’টি গ্রুপকে ২০ টাকা করে। সবচেয়ে বেশি টাকা দিতে হয় সিটি করপোরেশনকে (৭০ টাকা), এমনকি ডাস্টবিনের জন্যও টাকা দিতে হয়। সঙ্গত কারণেই ডাব বিক্রেতার নাম প্রকাশ করা হলো না।
 
তার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই হাজির তেজগাঁও থানার আদায়কারি আলমগীর হোসেন। তার চোটপাটেই আলাদা। একজন ডাব বিক্রেতা ক্রেতার সঙ্গে দরদাম করছিলেন, আদায়কারি ধমক দিয়ে বললেন, ওই মিয়া আমারে বিদায় করো।
 
টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় কথা হয় আদায়কারির সঙ্গে। প্রশ্ন ছিলো কিসের টাকা নিলেন? জবাবে বললেন এটা জানার দরকার নেই। আবারও অনুরোধ করলে রাখঢাক না করে বললেন তেজগাঁও থানার টাকা। শুধুকি ডাবের দোকান থেকে টাকা তোলেন! না আরও অনেক দোকান থেকে তুলি।
 
একজন ডাব বিক্রেতা জানালেন, কারওয়ান বাজারে এ রকম ৪০ জনের মতো ভাসমান ডাব বিক্রেতা রয়েছে। যারা রাস্তার উপর বসে ডাব বিক্রি করেন। আরও অন্যান্য ভাসমান দোকানের কোনো ইয়াত্তা নেই। যারা ওই পথ দিয়ে গেছেন তারা নিশ্চয় জানেন। ফোরলেন সড়ক হলেও এসব ভাসমান দোকানের কারণে দু’টি গাড়ি চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে। যে কারণে দিনরাত সব সময় জট লেগেই থাকে এই সড়কটিতে।
 
মানুষের দুর্ভোগ তাতে কিছুই যায় আসে না। পুলিশ সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি নিয়ে ব্যস্ত। যে কারণে পুলিশ নিজেও অসহায়। জোর দিয়ে কিছু বলতে পারে না দোকানিকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
এসআই/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।