ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ফাইল নম্বর ৬০৬-৪৮, অভিযোগের তীর বঙ্গবন্ধুর দিকে

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৮
ফাইল নম্বর ৬০৬-৪৮, অভিযোগের তীর বঙ্গবন্ধুর দিকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে গোপন নথি নিয়ে বইয়ের প্রকাশনা উৎসব শুক্রবার

ঢাকা: ১৯৪৮ সাল...পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ....ফাইল নম্বর ৬০৬-৪৮। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সেই গোপনীয় ফাইল উদঘাটিত হয়েছে। অভিযোগের তীর শেখ মুজিবুর রহমানের দিকে....। 

জাতির পিতার বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার এমন সব গোপন নথিগুলো বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার সেটা বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অমূল্য এসব ডকুমেন্ট দেশ-জাতি ও বহির্বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াসে ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রান্স অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে ১৪ খণ্ডে বই আকারে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। হাক্কানী পাবলিশার্স থেকে প্রকাশ করা হচ্ছে এই বই।

ভাষা আন্দোলনসহ বাঙালির স্বাধীনতার ধারাবাহিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত বইয়ের প্রথম খণ্ডের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর)। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির জনক মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে প্রকাশিত এ বইটির প্রথম খণ্ড (১৯৪৮-১৯৫০) প্রকাশনা উৎসব শুক্রবার বিকেল ৪টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে বলে বাংলানিউজকে জানান প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন। পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আইবি) প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট পাঠাতো। এরই ভিত্তিতে বিনা বিচারে আটক, মামলাসহ নানামুখী নির্যাতন চলতো। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নামে স্পেশাল ব্রাঞ্চে খোলা ব্যক্তিগত ফাইলে সংরক্ষিত ডকুমেন্ট সংকলন করা হয়েছে।

বইটির প্রথম খণ্ড ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত ডকুমেন্টের উপর ভিত্তি করে সংকলিত হলেও এ খণ্ডে ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা ও মানব দরদি মনের পরিচয় লিপিবদ্ধ হয়েছে।

১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত তিনি গোপালগঞ্জ মুসলিম স্টুডেন্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৬ সালে বিহারে দাঙ্গার সময় রিফিউজি ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে তিনি সেখানে দুর্গত মানুষের সেবায় প্রায় তিন মাস কাজ করে। কলকাতা দাঙ্গার সময় সময়েও তিনি লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ রিফিউজি ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে দাঙ্গাপীড়িত মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব বাংলার মানুষের গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করে।

ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের প্রথম দিকের জানা-অজানা অনেক তথ্যের সন্নিবেশ এ খণ্ডে।  

তথ্যগুলো তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশ আইবি’র রুটিন কাজের অংশ হিসেবে সংগ্রহ ও সংরক্ষিত হয়েছিল। এ সব রিপোর্টের মধ্যে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ওই সময়ের নাজিম উদ্দিন সরকারের বাঙালিবিরোধী অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষা-আন্দোলন ও জমিদারি প্রথা বিলুপ্তকরণ ইত্যাদিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১১.৩.১৯৪৮ তারিখ সচিবালয়ের গেটের সামনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি চলাকালীন গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবির সমর্থনে ভিসির বাঙলোয় অবস্থানকালীন ১৯.৪.১৯৪৯ তারিখে গ্রেফতার হন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চাপে কোনোরূপ আপস রফায় না গিয়ে তিনি নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ছাত্রত্ব বাতিল করে।

ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা ও খুলনা জেলার ‘দাওয়াল’দের সংগঠিত করে তাদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।  

পাঠকরা স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের জন্ম, মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাদণ্ড, বঙ্গবন্ধুর লেখা চিঠি, তার কাছে বিভিন্ন নেতা-কর্মী ও আত্মীয়-স্বজনদের চিঠি, বিভিন্ন মিটিং ও জনসভায় দেওয়া ভাষণ, কারাগারে আত্মীয়-স্বজন ও নেতা-কর্মীদের সাক্ষাৎকার সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রভৃতি তথ্য পাবেন বইটিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।