ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেই সড়কে!

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৮
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেই সড়কে!

ঢাকা: সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চলন্ত গণপরিবহনের দরজা বন্ধ রাখা, চালক-হেলপারের পরিচিতি প্রদর্শন, যত্রতত্র পার্কিং না করা, আন্ডারপাস, ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার বাড়ানোসহ ১৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এর মধ্যে অন্তত ৭টি নির্দেশনা আগস্টের মধ্যেই বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছিল। অন্যগুলো ধাপে ধাপে অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু এসব নির্দেশনার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গণপরিবহন চলছে দরজা খোলা রেখেই। এই নির্দেশনাটি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু কোনো পরিবহনই দৃশ্যমান দু’টি স্থানে চালক ও হেলপারের ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর ও মোবাইল নম্বর প্রদর্শন নিশ্চিত করেনি।
 
নির্দেশনা অমান্য করে মোটরসাইকেলে দিব্যি তিনজন করেও ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং হেলমেট ছাড়াই। দূরপাল্লার বাসে যাত্রীদের সবার সিটবেল্ট বাধ্যতামূলক বলা হলেও অধিকাংশ বাসে সিটেবেল্টই নেই।
 
ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাসের পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপারও চলছে হরহামেশা। অথচ এসব স্থাপনার ১শ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার পুরোপুরি বন্ধ করার কথা।
 
ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাসগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত, প্রয়োজনীয় লাইট, সিসিটিভি স্থাপনসহ ব্যবহারের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিতে কথা বলা হলেও তা হয়নি।
 
রাজধানীর সব সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান হয়নি। হয়নি হকারমুক্ত ফুটপাত। চলছে অবৈধ পার্কিংও। সব সড়কের নামফলকও দৃশ্যমান হয়নি।
 
অন্য নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুকরণ, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা শহরের সব সড়কের রোড ডিভাইডারের উচ্চতা বৃদ্ধি করে বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি।
 
তবে মহাখালী ফ্লাইওভারের পর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত (আপ এবং ডাউন) ন্যূনতম দু’টি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে। তবে অন্য স্থানে এটির দেখা নেই।
 
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনাটি বাস্তবায়নের বিষয়ে বিআরটিএ, কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সঙ্গে কথা বলে সাধারণ যাত্রী ও পথচারীদের সচেতনতার বিষয়টি ঘুরে ফিরে এসেছে। তাদের মতে, দীর্ঘদিনের অনিয়ম সারতে একটু সময় দিতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি। তাদের বারবার বলেও একটা বিষয় বোঝানো যায় না। আর গণপরিবহনের অনিয়ম তো রয়েছেই।  
চলন্ত অবস্থায় বাসের দরজা বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও বেশিরভাগ পরিবহনই তা মানছে না।  ছবি: শাকিল আহমেদমিরপুর-১০ নম্বর চত্বরে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, অনেক পথচারীই দুর্ঘটনায় পড়েন। অথচ আমরা বারবার তাদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের অনুরোধ করছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়ে অনির্ধারিত স্থান দিয়ে সড়ক পারাপারের কারণে নগদ অর্থদণ্ড এবং কারাদণ্ডও দেওয়া হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতে। কিন্তু এরপরও অনেকেই নিয়ম মানছেন না। তাই সাধারণ মানুষকেও একটু উদ্যোগী হতে হবে।
 
সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাফিক পুলিশ এখন সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে- বাসের দরজা খোলা রাখা, আইনগত বৈধ কাগজপত্র না থাকা, সিগন্যাল অমান্য করা, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো এবং দুইজনের বেশি আরোহীর চলাচল রোধ করার ওপর।
 
ঝোটন সিকদার বলেন, দরজা খোলা রাখার জন্য প্রায় প্রতিটি গাড়িতেই মামলা রয়েছে। কিন্তু তারা মামলা খাওয়ার পরও আইন মানছে না। যাত্রীরাও তাদের দরজা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছে না। ট্রাফিক পুলিশ এখন কাউকে কোনো রকম ছাড় দিচ্ছে না। এমনকি কোনো ফোনও তারা ধরছেন না। সুপারিশ এলেও মামলা থেকেই রেহাই নেই। কিন্তু অনিয়ম এরপরও হচ্ছে। তার অর্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও সবার সহযোগিতা করতে হবে। যে ভূমিকা আমরা নিচ্ছি, এটা অব্যহত থাকলে ধীরে ধীরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
 
ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির নেতা এবং শৃঙ্খলা বিষয়ক ভিজিল্যান্স টিমেরে আহ্বায়ক আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, ৪৭ বছর ধরে চলা একটা অনিয়ম কয়েকদিনেই বন্ধ হয়ে যাবে, এটা আশা করাও ঠিক না। আমরা কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সবগুলো নির্দেশনাই বাস্তবায়ন করা হবে।
 
এই পরিবহন নেতা বলেন, শর্ষের মধ্যেই ভূত। যত অবৈধ কাজ হচ্ছে বিআরটিএতে। সেখানে অনিয়ম বন্ধ হলে সড়কের অর্ধেক অনিয়ম এমনিই কমে যাবে। আমরাও চাই না ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালাতে, রুট পারমিট ছাড়া গাড়ি চালাতে, লক্কর-ঝক্কর গাড়ি চালাতে। কিন্তু যে সিস্টেম বানানো হয়েছে, এটা আগে ঠিক করতে হবে। এছাড়া সাধারণ মানুষ এবং ট্রাফিক পুলিশকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।  

যত্রতত্র যাত্রী ওঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটা কার দোষে হয়? অবশ্যই যাত্রীর দোষ। সে স্টপেজে না গিয়ে তার ইচ্ছামত জায়গায় হাত ওঠায়। প্রতিযোগিতা এবং আয়ের লোভে চালক দাঁড়িয়ে যায়। বাঁধে জ্যাম। আবার নামার সময়ও একই বিষয়। বাসার কাছে বা ইচ্ছামত জায়গায় না নামিয়ে দিলে চালক, হেলপারের গায়ে পর্যন্ত হাত তোলা হয়। চালক নামায়, জ্যাম লাগে। অনেক সময় দুর্ঘটনাও হয়।
 
এসব বিষয়ে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক মো. মাসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে আমাদের ভ্রাম্যমাণ টিমগুলো প্রতিনিয়ত জরিমানা করছে এবং কারাদণ্ড দিচ্ছে। বিআরটিএতেও অনিয়ম হলে আমাদের অভিযোগ দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দেশটা আমাদের সবার। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিতে আনতে সবাইকে একসঙ্গেই কাজ করতে হবে। শুধু একটি সংস্থার পক্ষে এটি দুরূহ।
 
সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ১৬ আগস্ট নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৮
ইইউডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।