ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বেচ্ছায় মামলা নিয়ে সড়কে দাপিয়ে চলছে বাস!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৮
স্বেচ্ছায় মামলা নিয়ে সড়কে দাপিয়ে চলছে বাস! সড়কের পাশ রাখা কয়েকটি বাস, ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখিয়েছে। আন্দোলনের পর থেকেই সরকারের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপরতা হয়ে ওঠে। সড়কে-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে তারা।

এরই মধ্যে কোরবানির ঈদ চলে আসায় সুযোগ বুঝে সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন নামিয়ে দেন মালিক-শ্রমিকরা। কিন্তু ঈদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি নাটোরের লালপুরে বাস-লেগুনা সংঘর্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে আবারও অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

সারাদেশের ন্যায় বগুড়ায়ও অভিযান শুরু করে তারা। অপরাধ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। তবে মালিক-শ্রমিকরা নিজ নিজ যানবাহনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় মামলা নিয়ে যানবাহন চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে জেলা শহরে চলাচলকারী বাসের মালিক-শ্রমিকরা এগিয়ে রয়েছেন।

বুধবার (২৯ আগস্ট) পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্যই উঠে আসে। তবে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই নাম প্রকাশে রাজি হননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, ফল পট্টি, হাড্ডিপট্টি ও সাতমাথা স্ট্যান্ড থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে স্বেচ্ছায় মামলা নিয়ে অসংখ্য বাস চলাচল করছে। এরমধ্যে হাড্ডিপট্টি থেকে শেরপুর হয়ে ধুনট-গোসাইবাড়ী, সাতমাথা থেকে শেরপুর করতোয়া গেটলক সার্ভিস অন্যতম। করতোয়া গেটলক সার্ভিসের ব্যানারে প্রায় ৫৬টি ও ধুনট-গোসাইবাড়ী রুটে প্রায় ৬০টির মত বাস চলাচল করছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, এসব বাসের একটিরও রুট পারমিট নেই। অনেকগুলোর ফিটনেস ও আপটুডেট কাগজপত্রও নেই। কিন্তু পুলিশ অনেক বাসের বিরুদ্ধেই মামলা দিলেও মামলার স্লিপ নিয়েই সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন চালকরা।

অনেকেই স্বেচ্ছায় মামলা নিয়ে সংগঠনের নিয়ম মেনে সড়কে চলাচল করছে। একটি মামলা থাকায় পুলিশ ওই বাসের বিরুদ্ধে আর মামলা দেয় না। এ সুযোগে মামলা নিস্পত্তি না করে পুলিশকে স্লিপ দেখিয়ে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

করতোয়া গেটলক সার্ভিসের চেইন মাস্টার হবিবর রহমান হাদু বাংলানিউজকে জানান, সংগঠনের নিয়মানুযায়ী বিরতি দিয়ে সাতমাথা থেকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক হয়ে শেরপুর পর্যন্ত নিয়মিত ২৫-৩০টি বাস চলাচল করছে। উভয়দিক থেকে ৬ মিনিট পরপর বাসগুলো ছেড়ে আসে। এসব বাসের কোনো রুট পারমিট নেই। এছাড়া প্রতিটি বাসের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। কিছু মালিক-শ্রমিক স্বেচ্ছায় মামলা নিয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

ধুনট-গোসাইবাড়ী রুটের চেইন মাস্টার সুজা জানান, এ রুটে বর্তমানে ৩৫টির মতো বাস বিরতি দিয়ে চলাচল করছে। চলাচলকারী সব বাসের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো মামলা রয়েছে।

ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জাহিদ জানান, কোনো বাস মালিক-শ্রমিক স্বেচ্ছায় মামলা নিচ্ছেন কী-না এমন তথ্য জানা নেই। তবে কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় এসব রুটে চলাচলকারী অনেক বাসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মোটরযান আইনে কিছু ফাঁক-ফোকর রয়েছে। মামলা দেওয়ার পর সাধারণত সংশ্লিষ্ট পেপারসগুলো জব্দ করা হয়। মামলা নিস্পত্তি করার পরই কেবল তা ফেরত দেওয়া হয়। এ অবস্থায় একটি যানের বিরুদ্ধে সব অপরাধে মামলা দেওয়ার পর তা নিস্পত্তি না করা পর্যন্ত নতুন করে মামলা দেওয়া মুশকিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৮
এমবিএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।