ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাতিরঝিলের পানির দুর্গন্ধ তাড়াতে উদ্যোগ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৮
হাতিরঝিলের পানির দুর্গন্ধ তাড়াতে উদ্যোগ হাতিরঝিল। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হয়ে ওঠা হাতিরঝিলের পানি ফিরে যাচ্ছে তার পুরনো রূপে। উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে পানি। দুর্গন্ধে লেকের পানিতে বোটিং কিংবা পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়ানো দুষ্কর হয়ে উঠেছে। নগরবাসীর নির্মল শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার এ মুক্ত বিনোদনকেন্দ্রের পানি দূষিত হয়ে ওঠায় হতাশ পর্যটকরা।

এ অবস্থায় হাতিরঝিলের পানি দুর্গন্ধমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)।  এয়ারেশন, রাসায়নিক ও বায়োলজিক্যাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লেকের পানি দূষণমুক্ত করা হবে।

রাজউক সূত্র জানায়, লেকের বিভিন্ন স্থানের পানির নমুনা সংগ্রহ করে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।   সেখান থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, হাতিরঝিলের পানি বর্তমানে অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে দূষিত ও জলজ উদ্ভিদ-প্রাণীর জন্য সম্পূর্ণরূপে অনুপযোগী।  এই পানি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।  

এ অবস্থায় লেকের পানি পরিশোধনের জন্য একটি সমন্বিত, সাশ্রয়ী ও টেকসই প্রতিকার কর্ম পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রস্তুত করা এই সমন্বিত পরিশোধন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, উচ্চক্ষমতার কম্প্রেশার, লেকের তলদেশে প্রতিনিয়ত বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থা,  পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উন্নীতকরণ, পন্টুন বোটের সাহায্যে পানিতে এক ধরনের ওষুধ স্প্রে করা। এছাড়া বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পানির গুণগত মান উন্নয়ন করা হবে।

মূলত বিদেশে পাঠানো হাতিরঝিলের পানি নমুনার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই এ উদ্যোগ।

পানির নমুনা বিদেশে পাঠিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে ‘হাতিরঝিল লেকের দূষিত পানি পরিশোধন’ প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে রাজউক। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা।  চলতি সময় থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে পানি দুর্গন্ধমুক্ত করা হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে।  পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে হাতিরঝিলের পানিশোধন প্রক্রিয়ার জন্য যথাযথ ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, পানি দূষণরোধে প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, উপকরণ, মেশিন, কেমিক্যাল সংগ্রহ ও নির্ধারিত স্থানে একটি ওয়্যারহাউজ করা হবে।  

হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের লেক একটি স্টর্ম ওয়াটার রিটেনশন বেসিন হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।  কিন্তু লেকের নালা এরিয়ায় স্টর্ম ও স্যুয়ারেজ লাইন আলাদা নয়।  ফলে বেশিরভাগ সময় পয়োঃবর্জ্য মিশ্রিত পানি হাতিরঝিল লেকে পড়ছে। এছাড়া নালা এলাকাগুলো থেকে কারখানার বর্জ্যও পড়ছে।  বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির সময় লেকের নালা খুলে দেওয়া হয়।  ফলে পয়োঃবর্জ্য সরাসরি ঝিলের লেকে পড়ে।

হোটেল সোনারগাঁওয়ের পেছনের অংশে লেকের পানি দূষণের প্রধান উৎস বন্ধ করা হবে।  পান্থপথ বক্স কালভার্ট থেকে আসা বর্জ্য পুরো লেকে ছড়াতে না দিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাম্পের সাহায্যে অপসারণ করা হবে।

রাজউক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) প্রকৌশলী সামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মূলত হাতিরঝিলের পানি দূষণমুক্ত করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।  পানি বিদেশ থেকে পরীক্ষা করেই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।  প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর হাতিরঝিলের পানিতে আর দুর্গন্ধ থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৮
এমআইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।