ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাহেব আলীর ‘ভাস্কর্যে’ স্বাধীনতা যুদ্ধ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৮
সাহেব আলীর ‘ভাস্কর্যে’ স্বাধীনতা যুদ্ধ সাহেব আলীর বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুলছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র, ছবি: বাংলানিউজ

পটুয়াখালী: সাহেব আলী। বয়স ৫৫ বছর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বয়স তার ছিলো আট বছর। বয়সে ছোট হওয়ায় তখন যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। তবে, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে জীবন-যুদ্ধে হার না মেনে শিল্পের নিপুণ ছোঁয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাহেব আলী।পেশায় নির্মাণশ্রমিক হওয়ায় শিল্প সত্তা হৃদয়ে গেঁথে রেখেছেন তিনি। তাই তিনি ভাস্কর্যের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিভিন্ন ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সাহেব আলীর বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে। যেখানে বাড়ির পাশেই একখণ্ড জমিতে গড়ে তুলছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র।

জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে গ্রামীণ সড়কের পাশে গড়ে তোলা এ কেন্দ্রে এরই মধ্যে স্থান পেয়েছে ৩৭টি ভাস্কর্য। সাহেব আলী এখানে ৭১টি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
নিজের তৈরি ভাস্কর্য ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সাহেব আলী, ছবি: বাংলানিউজএরমধ্যে তিনি ৩৭টি ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যাতে মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, বিজয় দিবসসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিভিন্ন ধরনের চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি। অর্থাভাবে বাকি ৩৪টির কাজ এখনও শুরু করতে পারেননি বলে জানান সাহেব আলী।

তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় বয়স কম ছিলো। তাই তেমন কিছু আমার মনে নেই। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার ১৯৮৬ সালে মুন্সিগঞ্জের একটি চালকলে শ্রমিক হিসেবে যোগ দেই। সেখানে রাহিমা নামে এক নারী শ্রমিকের কাছ থেকে যুদ্ধের বিভিন্ন কথা শুনেছি। ওই দিনের কথাগুলো আমার এখনো মনে পড়ে। তাই ওই চিন্তা থেকেই ভাস্কর্যে মাধ্যমে যুদ্ধের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানোর জন্যই আমার এ চেষ্টা। যা দেখে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
ভাস্কর্য দেখতে বিনোদন কেন্দ্রে শিক্ষার্থী ও সাধারণ দর্শনার্থীরা, ছবি: বাংলানিউজ
সাহেব আলী আরও বলেন, আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের সেসব স্মৃতি ধারণ করেছি। তা বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। বর্তমান প্রজন্ম শুধু পাঠ্যবই থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ধারণা পাচ্ছে। কিন্তু তারা এ ধরনের বিনোদন কেন্দ্র এসেও স্বাধীনতা যুদ্ধের ধারণা পেতে পারে।  

সাহেব আলীর এমন ভ্স্কার্য নির্মাণ দেখে গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অভিভূত হচ্ছেন।
সাহেব আলীর তৈরি বিভিন্ন ভাস্কর্য, ছবি: বাংলানিউজপটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আবু সাইদ বলেন, আমরা পাঠ্যবই থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে জেনেছি। তবে বিনোদন কেন্দ্রে থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাচ্ছি।

আউলিয়াপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল জলিল হাওলাদার বলেন, সাহেব আলী মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে আমরা অভিভূত ও আনন্দিত। তবে তার ইচ্ছে অনুযায়ী কার্য সম্পাদনে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। তাই সরকার বা সমাজের ধনাঢ্যদের সহযোগিতা কামনা করেছি।

বাংলা‌দেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৮
এমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।