প্রায় প্রত্যেকটি ট্রেনই দেড় থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। এমনকি কমলাপুরে পৌঁছাতেও বিলম্ব হচ্ছে অনেক ট্রেনের।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, শেষ সময়ে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে ট্রেনগুলো ধীর গতিতে চলছে। আর অনেক ট্রেন সময় মতো ঢাকায় পৌঁছাতেও পারছে না। তাই ঢাকা ছাড়তেও দেরি হচ্ছে এসব ট্রেনের।
সোমবার (২০ আগস্ট) ভোর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে যাত্রী ও রেল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার মোট ৬৯টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে পাঁচটি ঈদ স্পেশাল, ৩১টি আন্তঃনগর। বাকি ৩৩টি ট্রেন লোকাল, মেইল এবং কমিউটার ট্রেন।
তবে সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত অনেক ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। ফলে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে যাত্রাও করতে পারছে না সময়মতো। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের ভাগাভাগি করতে গ্রামে ফেরার অপেক্ষায় হাজার হাজার মানুষ।
ভোর ছয়টায় রাজশাহীর উদ্দেশে আন্তঃনগর ধুমকেতু এক্সপ্রেসের কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি সকাল ৯টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত স্টেশনে দাঁড়ানো ছিলো। খুলনা অভিমুখী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ভোর ৬টা ২০মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা; তবে সেটি কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে।
আর নীলফামারীর চিলাহাটি অভিমুখী আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ঢাকা স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি এখনও এসে স্টেশনে পৌঁছায়নি। স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি রংপুর থেকে ছেড়ে আসা রংপুর এক্সপ্রেসও।
রেল কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, নীলসাগরের ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে ১০টা ৪০ মিনিটে। আর রংপুর এক্সপ্রেসের সকাল ৯টায় রংপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা থাকলেও আড়াই ঘণ্টা দেরিতে সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে ১১টা ৪৫মিনিটে।
সূচি বিপর্যয়ের একই অবস্থা ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের বিশেষ ট্রেন ‘দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল’ ও লালমনিরহাট-ঢাকায় চলাচলকারী ‘লালমনি স্পেশালে’রও।
স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা। তবে ট্রেনটি এখনও ঢাকায় পৌঁছায়নি। আর ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার থাকলেও এখনও স্টেশনে আসেনি লালমনি স্পেশালও।
এদিকে ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয়ের কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অপেক্ষারত যাত্রীরা। মো. শরীফ নামে নীলসাগর এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, ‘মহাসড়কের যানজট আর ভাঙাচোরা রাস্তার ভোগান্তি কমাতে ট্রেনের টিকিট কাটলাম। কিন্তু এখানেও সেই একই ভোগান্তিই। ’
‘সকাল সাড়ে ৭টা থেকে স্টেশনে বসা। সকাল ৮টায় ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৯টা বাজে অথচ ট্রেন এখনও আসে-ই নি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে সঙ্গে থাকা শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
সময় বিপর্যয় নিয়ে তার পাশে থাকা আরেকযাত্রী জামালপুরের সোলায়মান মিয়ার ভাষ্য, পত্রিকা পড়ে আর অন্য যাত্রীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় পার করছি। ট্রেনের টিকিট কাটা হয়ে গেছে। অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
যোগাযোগ করা হলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, কোনো ট্রেন কমলাপুর থেকে দেরিতে ছাড়ছে না। তবে ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকায় ধীর গতিতে চালাতে হচ্ছে। আবার দেরিতে কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন আসায় যাত্রার ক্ষেত্রেও কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
‘আমরা সব সময় চেষ্টা করছি যাতে কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না হয়,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
ইএআর/এমএ