গনেশ কর্মকারের মতো কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেরই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে গিয়ে তারা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না।
গনেশ কর্মকার বাংলানিউজকে জানালেন, বর্তমানে অাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তৈরি দা, ছুরিসহ বিভিন্ন লৌহযন্ত্র বাজার দখল করে ফেলায় কামার শিল্পে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা পেশা বদলে জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।
একই গ্রামের সুবল কর্মকার বাংলানিউজকে জানান, এক সময় কামার শিল্পের অনেক কদর ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে তাদের হাতে তৈরি দা, বটি, টাকশাল, ছুরি, কাস্তে, কোড়াল, কোদাল, খুন্তি, শাবলসহ বিভিন্ন লৌহযন্ত্র কিনে নিয়ে যেতেন। সেসময় তাদের সুখের দিন ছিল। এখন অাধুনিকতার ছোঁয়ায় দুর্দিন তাদের ঘিরে ফেলেছে। অপেক্ষাকৃত কম দামে এসব জিনিস বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে তাদের কদর অনেকটা কমে গেছে।
গোকর্ণ গ্রামের কামারপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে লোহার যন্ত্রপাতি নিয়ে কোনো ব্যস্ততা নেই। কোরবানির ঈদের অাগমুহুর্তে যেখানে তাদের দম ফেলার সময় থাকার কথা নয়, অথচ সেই পাড়া এখন নিস্তব্ধ-নীরব।
জানা গেলো, এ পাড়ায় ৪০ কামার পরিবারের বসবাস। এখন হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের লোক ছাড়া বাকিরা এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
হাতের তৈরি যন্ত্রপাতির দাম প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে প্রদীপ কর্মকার নামে আরেক কামার শিল্পী বাংলানিউজকে বলেন, লোহার ওজন অনুযায়ী যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হয়। এক কেজি ওজনের লোহার দা এক পিস ৭০০ টাকা, টাকশাল মিডিয়াম এক পিস ৮০০ টাকা, ছুরি ২০০/৩০০ টাকা, বটি ৪০০ টাকা, কুবের দা ৫০০ টাকা পিস।
সুধীর কর্মকার নামে ওই পাড়ার এক কামার শিল্পী বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ বছর আগেও পাইকাররা যে পরিমাণ কাজের অর্ডার দিতো, এখন এর অর্ধেকও দেয় না। গত বছর যা বিক্রি করেছি তার চেয়ে এবছরের অবস্থা আরো খারাপ।
তার দাবি, রুগ্ন এই শিল্পটিকে বাঁচাতে হলে বিদেশ থেকে আমদানি করা মালামালের ওপর অারোপিত কর (ট্যাক্স) বাড়িয়ে দিতে হবে। তাছাড়া এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর পথ সুগম হবে তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
আরএ