লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা নির্ধারিত নৌপথের দূরত্ব ১৫৪ নর্টিক্যাল মাইল বা ২৭৫ কিলোমিটার। এ রুট দিয়ে চলাচলরত নৌযানকে মেহেন্দিগঞ্জের কালিগঞ্জ হয়ে মেঘনায় নদী পাড়ি দিতে হয়।
বিআইডব্লিউটিএ’র বৈধ রুট না হলেও তাই দীর্ঘদিন ধরে লঞ্চ মালিক ও চালকরা মিয়ারচর হয়ে ঢাকা-বরিশাল তাদের নৌযান চালনা করে আসছেন। এরফলে ঢাকা-বরিশাল নৌপথের দূরত্ব কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৫ নর্টিক্যাল মাইল বা ২৬২ কিলোমিটার। কিন্তু মিয়ারচরের একটি বিশাল এলাকাজুড়ে কিছুদিন পর পর পলি পড়ে ভড়াট হয়ে যায়। আর সেই এলাকাজুড়ে কোটি টাকা খরচ করে প্রতিনিয়িত ড্রেজিংও করে আসছে বিআইডব্লিউটিএ।
সম্প্রতি ওই এলাকায় একটি বাল্কহেড ডুবে যাওয়ায় মিয়ারচর এলাকার একটি চ্যানেল সরু হয়ে যায়। ফলে সেখান থেকে লঞ্চ চালনা ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ালে গত ৬ আগস্ট থেকে মিয়ারচর হয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এ মর্মে সম্প্রতি নদী বন্দরগুলো থেকে কড়া নির্দেশনা জারি করা হয়েছে চালকদের প্রতি।
প্রকৌশল ও নৌ-নিরাপত্তা বিভাগ সূত্র জানাচ্ছেন, মিয়ারচরে নদীতে পানির চাপ বেশ কয়েকটি দিক থেকে আসায় সেখানে নির্দিষ্ট বিশাল এলাকাজুড়ে প্রতিনিয়ত পলি ও ডাস্ট জমে। অনেক সময় এমনও হয় ওইখানে নির্দিষ্ট পথ ধরে ড্রেজিং করার সপ্তাহখানেকের মধ্যে আবারো পলি পড়ে যাচ্ছে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কারণে এটি ঢাকা-বরিশালের নির্দিষ্ট রুট না হলেও সময় ও খরচ বাঁচাতে নদী পথটি দীর্ঘদিন ধরে সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
এদিকে লঞ্চের মাষ্টাররা জানাচ্ছেন, ওইপথ দিয়ে লঞ্চ চালনা করলে সময়ের নাব্যতা সঙ্গে তেলখরচও অনেকটাই কমতো। তবে এখন বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনার কারণে দেড়ঘণ্টা সময় অতিরিক্ত পথ লঞ্চ চালিয়ে কালিগঞ্জ থেকে ঘুরে যেতে হয়। কালিগঞ্জের অনেক এলাকায় ডুবোচর রয়েছে আবার বৃহত্তর মেঘনায়ও ডুবোচর রয়েছে যা স্বাভাবিক লঞ্চ চালনাকে প্রতিনিয়ত ব্যাহত করছে।
‘পারাবত-১২’ লঞ্চের মাস্টার আবুল কালাম বাংলানিউজেক জানান, আধুনিক সরঞ্জাম যেমন, রাডার, ভিএইচএফ, জিপিএস, ইকোসাউন্ডার যাদের রয়েছে তাদের বরিশাল-ঢাকা রুটে নৌযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে না। ডুবোচর পানি কম এগুলো মেপেই যাওয়া যায়। তবে পুরাতন লঞ্চগুলো যাদের এগুলো নেই তাদের সমস্যায় পড়েতে হয়। আর আগে থেকেই বড় আকারের নৌযান যাদের বেশি পানির প্রয়োজন তাদের মিয়ারচর থেকে যেতেও বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে ছোট লঞ্চগুলো সেখান থেকে অনায়াসে চলে যেতে পারতো। বর্তমানে ঢাকার সদরঘাট থেকে মিয়ারচর হয়ে সব ধরনের লঞ্চ চালনাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি যদি সেখান থেকে কোনো লঞ্চ যায় কিংবা সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় চরে আটকে পড়ে অথবা কোনো ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার হয়। তবে সেই লঞ্চ ও লঞ্চের মাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর বরিশাল নদী বন্দরে তো ছাড়ার আগেই মুচলেকার মতো দিতে হয়।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ'র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বাংলানিউজকে জানান, মিয়ারচরে এমনিতেই নাব্যতা সংকট তার ওপর কয়েকদিন আগে একটি বাল্কহেড ডুবেছে। এর কারণে নৌপথটি ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই কালিগঞ্জ থেকে লঞ্চগুলো ঘুরে যেতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশনা যারা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৮
এমএস/এএটি