ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রস্তুত কামারশালার লোহা শিল্পীরা

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৮
প্রস্তুত কামারশালার লোহা শিল্পীরা বাংলানিউজ (ফাইল ফটো)

ঢাকা: আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত হতে শুরু করেছে নগরীর কামারশালাগুলো। এরই মধ্যে জোগাড় সম্পন্ন হয়েছে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত কাঁচা-পাঁকা লোহা বা ইস্পাতের। এসেছে বস্তায় করে ভালোমানের কয়লাও। যদিও এখনো জমেনি বিকিকিনির হিসেব। তবে চিন্তার কোনো বালাই নেই এতে। দুই-তিন দিন বাদেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকবে বলে ধরনা লোহা শিল্পীদের।
 

প্রায় দুই কোটি নাগরিকের এই মেগা সিটির প্রধান লোহা-লক্কড়ের তৈরি তৈজসপত্র ও দা-বটির বাজার পুরান ঢাকায়। এরপরই ঠাঠারি বাজার, কাপ্তান বাজার, মীর হাজারীবাগ, পোস্তগোলা, শনির আঁখড়া, আজমপুর, নিউমার্কেট, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, নদ্দা, মিরপুর, আব্দুল্লাহপুরে রয়েছে কামারশালা ও নিত্য ব্যবহার্য এইসব পণ্যের দোকান।


 
বছরজুড়ে তেমন কোনো খোঁজ-খবর না থাকলেও কোরবানির ঈদ এলেই ব্যস্ততা বাড়ে কামারশালার। দূর থেকেই শোনা যায় কামারপট্টিতে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ। নতুন চাপাতি, বটি, ছুরি, চাকু তৈরি ও পুরনোগুলোতে শান দিতে সময় কাটে কামারশিল্পীদের। আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এমনই কর্মযজ্ঞে এখন ব্যস্ত শহরের কামারশালাগুলো।
 
বুধবার (১৫ আগস্ট) কারওয়ানবাজারসহ কয়েকটি কামারপট্টি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার যন্ত্রপাতি তৈরিতে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়েছে কামারশিল্পীদের। ঈদের বিক্রি এখনও তেমন শুরু না হলেও যন্ত্রপাতি তৈরিতে কারও যেনো দম ফেলার ফুরসত নেই।
 
কামারশালার লোকজন বলছেন, আগের মতো তাদের পণ্যের চাহিদা নেই। ঘর-গৃহস্থলীতে কর্মজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে ভীনদেশি স্টেইনলেস স্টিলের ছুরি, কাঁচি ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।  

কর্মজীবী নারীদের ব্যাক পেইন কমাতে চিকিৎসকরা যে বটি ব্যবহারে অনুৎসাহিত করে ছুরি ব্যবহারের পরামর্শ দেন-তাও আজ অজানা নেই লোহা শিল্পীদের। তাছাড়া একটা জিনিস কিনলেও তো পরের বছর কিনতে হয় না, তাই ব্যবসায় একটা মন্দা ভাব এসেছে বলে জানালেন তারা।  
 
তবে কামারপট্টির লোকদের ভাষ্য, বছরে অনন্ত একবার জমজমাট ব্যবসা করেন তারা। তা হচ্ছে তা এই কোরবানির ঈদে। এজন্য ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে কয়লার আগুনে রড গলানো, গ্লেয়ারিং মেশিনে বটি, দা, কুড়াল, চাকু ও ছুরিতে শান দেওয়া। আর হাঁতুড়ি দিয়ে লোহা পিটিয়ে পাইল করা, যন্ত্রপাতিতে বাট লাগানোসহ নানা কাজের ব্যস্ততা।  
কারওয়ান বাজারের কামারপট্টিতে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন সুবির কর্মকার। কয়লার আগুনে লোহা পোড়াতে পোড়াতেই বাংলানিউজের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি। বলেন, ‘সারা বছর মোটামুটি হলেও ঈদের কয়েকদিন খুব ভালো বেচা-বিক্রি হয়। ঈদ এলে আমাদের ব্যস্ততাও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এবারের ঈদের বেচা-বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। শুধু ঢাকার বাইরে থেকে অর্ডার আসছে। যন্ত্রপাতি তৈরি করে রাখছি। আশা করি  ২/৩ দিনের পর ভালো বিক্রি হবে। ’
 
এবার কেনাকাটা ভালো হবে বলে আশা করছেন কাপ্তান বাজারের ভাই ভাই ট্রেডার্সের মহসিন আলীও। তিনি বলেন, সম্ভবত এবার গরুর জোগান ও চাহিদা ভালো থাকবে। নির্বাচনের বছর হওয়ায় অনেকেই কোরবানি দিতে চাইবেন। এতে পশুর দাম ও পশু জবাই, মাংস কাটার যন্ত্রপাতির বিকিকিনি ভালো হবে।
 
কেবল নতুন পণ্য কিনতেই নয়, কামারশালাগুলোতে মানুষ আসছেন পুরোনো যন্ত্রপাতি শান দিতেও। নদ্দা বাসস্ট্যান্ডের পাশের কামারশালায় চাপাতি ও ছুরি ধার দিতে এসেছিলেন ভাটারার মোফাজ্জল হোসেন।  

তার ভাষ্য, এখন ঢাকার মানুষ তো গরু কন্ট্রাক্টে কাটতে দিয়ে দেয়। ওই সব মৌসুমী কসাইরা আবার ঢাকার বাইরে থেকেও আসে। এদের সবাই ছুরি, চাপাতি, বটি নিয়ে আসে। তবে বাচ্চারা মজা করে মাংস কাটতে চায়। আর এজন্য ছুরি ও বটির প্রয়োজন হয়।
 
কামারপট্টি ঘুরে দেখা যায়, এককেজি ওজনের চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। বটি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা। সাধারণ বটির মূল্য আকারভেদে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।  

পশু জবাই করার ছুরির মাপ অনুযায়ী, ৫০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা, চামড়া ছোলার চাকু ৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, হাড় ভাঙার জন্য চায়নিজ কুড়াল ৭০০ টাকা ও বাংলাদেশি কুড়াল ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৮ 
আরএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।