ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চামড়া কেনার পুঁজি সংকটে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
চামড়া কেনার পুঁজি সংকটে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহের পর সংরক্ষণের জন্য তাতে লবণ দেওয়া হচ্ছে/ফাইল ছবি

রাজশাহী: কোরবানির ঈদের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। সামনে চামড়া সংগ্রহের মৌসুম। কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় ঈদের আনন্দও নেই রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের মনে। এর ওপর কোরবানির আগেই হঠাৎ করে কমেছে চামড়ার দাম।

ফলে এবারের ঈদে চামড়া কেনা-বেচা নিয়ে অনেকটাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

এতে চামড়ায় অর্থলগ্নি নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রতিবার ঈদের আগে টাকা দিতেন ট্যানারি মালিকরা। তবে স্থানান্তরসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এবারও টাকা দিতে চাচ্ছেন না তারা। আর দাম কমার আশঙ্কায় ঋণ দেয়নি ব্যাংকগুলোও। এতে চামড়া কেনার জন্য চাহিদামতো এবার পুঁজি পাচ্ছেন না রাজশাহীর ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়া ব্যবসায়ীরা।

আর প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে না পারলে পাড়া-মহল্লায় ঢুকে পড়বে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। পরে দাম না পেলে সেসব চামড়া সীমান্ত হয়ে ভারতে পাচার হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।  

রাজশাহীর সপুরা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী সাজ্জাদ আলী বলেন, কোরবানির ঈদ এলেই অজানা কারণে বাজারে লবণের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।  

বাজারে লবণের দাম বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রতি বস্তা লবণ এক হাজার ৩শ’ টাকা থেকে এক হাজার ৪শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে চামড়া সংরক্ষণ ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এর ওপর রয়েছে শ্রমিকের মজুরি এবং পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে আসন্ন কোরবানির ঈদ নিয়ে ভালো নেই ব্যবসায়ীরা। বাজার মন্দা, অর্থ সংকট ও বকেয়া আদায় না হওয়ার কারণে এবার হতাশায় ভুগছেন তারা।

রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের থেকে ২০১৫-১৭ সালের বকেয়া বাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাবেন। এ অবস্থায় আবারও চামড়ার দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। এছাড়া চামড়ার দাম নির্ধারণের পরেও সেই দামে কেনেন না ট্যানারি মালিকরা। ফলে চামড়া নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়তে হয় তাদের।

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম হবে ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম সারাদেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। আর ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। যা গত বছর ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা। তবে মহিষের চামড়ার দামের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।

আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, সাধারণত প্রতিবার ঈদে ৮০ থেকে ৯০ হাজার গরু-মহিষ ও প্রায় দেড় লাখ খাসি-ভেড়া কোরবানি হয়ে থাকে জেলায়। বিপুল পরিমাণ এই চামড়া তারা কিনে লবণ দিয়ে কয়েকদিন সংরক্ষণের পর নিয়ে যান নাটোরের আড়তগুলোতে। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা এখান থেকে সেসব চামড়া কিনে নিয়ে যান।  

এসব চামড়ার প্রায় পুরোটাই তাদের বিক্রি করতে হয় বাকিতে। প্রতিবছর বিক্রির ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে ট্যানারি মালিকরা টাকা পরিশোধ করে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আগের চামড়ারই প্রায় ৮০ ভাগ টাকা পরিশোধ করেননি ট্যানারি মালিকরা। ফলে ব্যবসায়ীরা চরম পুঁজি সংকটে পড়েছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঈদে চামড়া কিনতে না পারলে তা ফড়িয়াদের হাতে চলে যাবে।

আর দাম না পেলে ফড়িয়াদের হাত ঘুরে রাজশাহীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এই চামড়া ভারতে পাচার হয়ে যাবে। এ অবস্থায় বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও সরকারের প্রতি ঈদের পর সীমান্তে পথে নজরদারি এবং লবণের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।