খুলনার একমাত্র চামড়াপট্টি শেখপাড়ার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরেজমিনে কথা বললে তারা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তারা জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে তারা পুরোপরি জিম্মি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, যশোরের নওয়াপাড়ার এসএ ইন্ডাসট্রিজ ও সুপার লেদার কমপ্লেক্স চামড়া কিনত। গত বছরও তারা প্রচুর পরিমাণে চামড়া কিনেছে। এই বছর কোম্পানি দু’টি সমস্ত মাদ্রাসাকে বলে দিয়েছে, তারা চামড়া কিনবে না। এবার খুলনাতে এতো চামড়া প্রসেসিং করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কোরবানিতে পুরাতন ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনবেন। জায়গা না থাকার জন্য রাস্তার উপর ৫-৭ দিন রেখে প্রসেসিং করতে হবে। তারপর বিভিন্ন কোম্পানি বা মোকামে চামড়া পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এই কাজে সিটি কর্পোরেশন যদি আমাদের বাধা দেয় তাহলে আমরা বিপদে পড়ে যাব। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম অস্তিত্ব সংকটে।
শনিবার (১১ আগস্ট) সকালে খুলনা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আগের বকেয়া না পাওয়া ও চামড়া সংরক্ষণের জন্য স্থান সংকটে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। প্রতি কোরবানিতে খুলনা জেলায় ২৫-৩০ হাজার গরু ও ৮-১০ হাজার ছাগল জবাই হয়।
তিনি আরও বলেন, এবছর চামড়া কিনতে পারবো কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। কারণ প্রতি বছর এমন সময় অনেক ট্যানারি অগ্রিম টাকা দেয়। কিন্তু এবছর তারও কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না।
আমান লেদার কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অর্ধশত বছরের পুরনো এ চামড়া পট্টি। ৭৫ থেকে ৮০ জন সদস্য ছিল আমাদের এই চামড়া সমিতির। এখন চামড়া বেচাকেনা করি ৭-৮ জন। এরমধ্যে দুইজনের দোকান আছে। আর বাকি ৩-৪ জন নিজেদের বাড়ির ভেতর একটা ঘরে আলাদা করে চামড়া পরিজাত করে। আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। খুলনার পাওয়ার হাউজমোড় এখন এমন একটি বাণিজ্যিক বা আবাসিক এলাকা হয়ে গেছে যে এখানে আর চামড়া রাখতে দিবে না। এখানে মনে হয় সামনের বছর আর চামড়া পট্টি থাকবে না। কারণ আমাদের দোকানের সামনে সিটি কর্পোরেশনের একটা হাইওয়েজ ভবন নির্মাণ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে সবসময় আবেদন করে আসছি আমাদের জন্য কিছু করার। সিটি কর্পোরেশন বা জেলা প্রসাশন যদি আমাদের আলাদা জায়গায় ঘর করে দিত তাহলে সরকারও উপকৃত হতো। কারণ চামড়াও একটা শিল্প। চামড়ার প্রসেসিং করতে আমাদের সুবিধা হতো। কিন্তু আমরা কখনও সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পায়নি। সামনে নতুন মেয়র আসলে আমরা সবাই তার কাছে যাবো। তিনি খুব আন্তরিক। হয়তোবা তিনি কিছু করতে পারেন। এই একটাই আশার আলো নিয়ে আছি আমরা।
সাহিদ হোসেন বলেন, এবার হয়তো বিভিন্ন মাদ্রাসা আমাদের চামড়া বাকিতে দেবে। কিন্তু আমরা কিনতেও ভয় পাচ্ছি। প্রতিটি গরুর চামড়া কেনা পড়ে প্রায় ৪০০-৫০০ টাকায়। এতে আবার ২০০ টাকার লবণ ও ২০০ টাকার অন্য খরচ আছে। এই চামড়া বাকিতে বা মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে কিনলে যদি ট্যানারিগুলো টাকা বকেয়া রাখে তাহলে আমাদের বড় একটা বিপদ এসে দাঁড়ায়।
মাহফুজ লেদারের মালিক মাহফুজুর রহমান বলেন, সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুটের দাম ৪০-৪৫ টাকা। খুলনাতে এ দাম আরও কম। এরপর প্রসেসিং ও সিলেকশন খরচ আছে। এতে বলা যায় চামড়ার ব্যবসা এবছর এক প্রকার দুর্যোগ।
তিনি জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় দেড় কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই টাকাগুলো পেলে আগের ঋণ পরিশোধ করে এবার চামড়া কেনা সম্ভব হবে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শেখপাড়া চামড়াপট্টির বাড়ির মালিকরা এখন আর চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান ভাড়া দিতেও চান না। বকেয়া আদায় করতে না পারা ও লোকসান দিতে দিতে এখানকার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। যে দুই-একটি দোকান আছে তারা আছে চরম অস্তিত্ব সংকটে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৮
এমআরএম/আরআর