ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মালিকদের খুশিমতো লঞ্চের টিকিট বিক্রির অভিযোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৮
মালিকদের খুশিমতো লঞ্চের টিকিট বিক্রির অভিযোগ সদরঘাটের সংগৃহীত ছবি

সদরঘাট ঘুরে: ‘ছুটির দিনের আয়েশ ভুলে উত্তরা থেকে সাত-সকালে রওনা দিয়ে এসেও কোন টিকিট পেলাম না। সব বড় বড় লঞ্চ থেকেই বলা হচ্ছে, টিকিট নাকি হেড অফিসে বুকিং দিয়েই শেষ, এখন আর অবশিষ্ট নেই! অথচ কাল রাতে সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম আজ ১৫ তারিখের টিকিট বিক্রি হবে’।

ঈদুল আজহায় বাড়ি যেতে লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বুকিং দিতে এসে এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছিলেন রাজধানীর উত্তরা থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বুকিং দিতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আতাউর রহমান।

শুধু আতাউর নন, এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে শুক্রবার (১০ আগস্ট) ঈদের অগ্রিম টিকিট বুকিং দিতে আসা সিংহভাগ মানুষের।

বেশিরভাগেরই শুনতে হচ্ছে ‘এখানে নয় বরিশালে আত্মীয়-স্বজনদের বলুন টিকিট বুক করতে’। টিকিট বুকিংয়ের বিপরীতে এমন উত্তরে তাই প্রশ্ন আসছে, বরিশাল হেড অফিসেই যেহেতু টিকিট বুক করা হবে তাহলে এখানে শুক্রবার বুকিং দেওয়া যাবে তা বলার কি দরকার ছিল?

জানা যায়, বিআইডব্লিওটিএ, ঢাকা নদী বন্দর, লঞ্চ মালিক সমিতির দুই দফা বৈঠক শেষে শুক্রবার লঞ্চের আগাম টিকিট বুকিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এসময়ে যেসব যাত্রীরা ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবেন তারা লঞ্চ বা নির্ধারিত কাউন্টারে এসে টিকিট বুক করতে পারবেন বলে জানানো হয়।

কিন্তু টিকিট বুক দিতে আসা বেশিরভাগ মানুষই ফিরেছেন খালি হাতে। তাদের শুনতে হয়েছে, ‘টিকিট শেষ’, ‘অনলাইন থেকে কিনুন’ (যদিও অনলাইনে টিকিট থাকার কোন প্রমাণ দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ), ‘বরিশাল থেকে সংগ্রহ করুন, এখানে শেষ’ ইত্যাদি। এছাড়া টিকিট বিক্রির নির্দিষ্ট স্থানে বসার কথা থাকলেও তাও করেনি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।  

যাত্রীদের অভিযোগ, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের মূল বাহন এই লঞ্চ হওয়ায় প্রতিবছর ঈদের সময়ে টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে লঞ্চ কোম্পানিগুলো। সারা বছর লঞ্চের টিকিট স্বাভাবিক নিয়মে বিক্রি হলেও ঈদ আসলেই টিকিট অনলাইনে, হেড অফিসে, শুরুর আগেই টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার কথা বলে লঞ্চের ম্যানেজার বা বুকিং সহকারীরা। কিন্তু আদতে লঞ্চের ৪০-৫০ ভাগ টিকিট জমা করে রাখা হয়। যা ভিআইপি ও পরিচিত যাত্রীদের দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘদিন পর যারা বাড়ি যান বিশেষত ঈদ মৌসুমে যখন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন তখন তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন নেভিগেশনের ম্যানেজার ঝন্টু বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ মৌসুম এলে যাত্রীদের চাপ বাড়ে তখন স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব না। আপনি আজ, কাল, পরশুর টিকিট দিতে বলুন? এখনি দিচ্ছি। আমাদের সব লঞ্চ আধুনিক তাই চাহিদা সবসময় বেশি। তাছাড়া আমরা অনলাইনে টিকিট বিক্রি করি এখানেও টিকিট যায়। আসলে পুরোটাই প্রাইভেট বা কোম্পানিভিত্তিক হওয়ায় এ সমস্যা বেশি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিআইডব্লিওটিএ বা সরকারকে আর কঠোর হওয়ার দাবিও তাদের।  

এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির কেউ কোন ধরণের মন্তব্য করতে রাজি না হলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বুকিং সহকারী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার নির্দেশ দেয় আর আমরাও তা পালন করি। তবে আমাদের বেশ কিছু ফর্মালিটিস পালন করতে হয়। কারণ আগে থেকে ডেকের টিকিট বিক্রি করা যায় না। কেবিন কয়টা থাকে? যা থাকে তার মধ্যে অনলাইন ও ফোনে বিক্রি শেষে ২৫-৩০ ভাগ যা থাকে তা ভিআইপি ও বিশেষ অনুরোধে কিছু মানুষকে দিতে হয়।  

ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) আলমগীর কবির বাংলানিউজকে বলেন, সবাই কম বেশি টিকিট পাচ্ছেন। আসলে ঈদ মৌসুমে টিকিট পেতে একটু সমস্যা হবেই। তবে দু’একটি লঞ্চ ঘুরলেই টিকিট পাওয়া যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৮
কেডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।