ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৮
যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): মো. রকি পুরান ঢাকার নবাবপুর এলাকার একটি হার্ডওয়্যার দোকানের কর্মচারী। বৃহস্পতিবার (০৯ আগস্ট) সকালে যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আসেন আবেদন জমা দিতে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে যখন তার আবেদন জমা দেওয়ার সময় এলো তখন তাকে জানানো হলো তার আবেদন সত্যায়িত করা হয়নি।

এসময় পাশ থেকে এক লোক ডাক দিয়ে অফিসের বাইরে নিয়ে রকিকে জানান, আরেকদিন আসতে হবে না ১৫০০ টাকা দিলেই সত্যায়িত করে আজকেই তার আবেদন জমা করার ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। তবে শুধু সত্যায়িত করে দিলে তাকে ৫০০ টাকা দিলেই হবে।

এমন চিত্র যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নিত্যদিনের ঘটনা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেরানীগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়নের ঝিলমিল প্রকল্পে স্থানান্তরিত হয় যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এ অফিস থেকে ঢাকার ১৩টি থানার বাসিন্দাদের নতুন পাসপোর্ট করা ও নবায়নসহ এ সম্পর্কিত সব সেবা দেওয়া হচ্ছে। থানাগুলো হল- যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শ্যামপুর, কদমতলী, খিলগাঁও, শাজাহানপুর, সবুজবাগ, ওয়ারী, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার।

জানা যায়, বছর না যেতেই এ পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে সক্রিয় হয়েছে একাধিক দালাল চক্র। এসব দালাল চক্রের কাজ হচ্ছে সত্যায়িত থেকে শুরু করে আবেদন জমা দেয়া ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের কন্ট্রাক্ট নেওয়া। দালাল চক্রের মধ্যে রয়েছে খোদ পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী থেকে শুরু করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।  

পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের নিচেই চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে আছে দালালরা। সেখানে বসেই তারা পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনকে সেবা দেওয়ার নাম করে ঠকিয়ে আসছে। পাসপোর্ট অফিসের বাইরের এসব দালালদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তেঘরিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নূরনবী। নূরনবীর নেতৃত্বে পাসপোর্ট অফিসে কাজ করেন দেলোয়ার, সেতু, রাশেদ, সেলিম ও রওশনসহ প্রায় ১৫ জন দালাল।  

পাসপোর্ট অফিসের নিচেই চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে আছে দালালরা

এসব দালালদের নেতৃত্ব দেন পাসপোর্ট অফিসের চতুর্থ তলার ৪০২ কক্ষে ডিসপাস শাখায় কর্মরত মো. মামুন। অভিযোগ রয়েছে মামুন বহিরাগত দালালদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জয় ও মনির নামে নিজস্ব দুইজন দালাল নিয়োগ দিয়েছেন। এদিকে পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জুয়েল, সিহাব ও জিয়াউলও দালালির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা মো. বিল্লাল বাংলানিউজকে বলেন, আমি পাসপোর্ট করতে এলে এক দালাল পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য আমার সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করে। তাকে সাত হাজার টাকা দিলে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই তিনি আমার পাসপোর্ট করে দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের চুক্তি আছে। আমাদের লোক নিয়ে গেলে লাইনে দাঁড়াতে হয় না। তাছাড়া পুলিশ ভেরিফিকেশনও আমরা কন্ট্রাক্টে করে ফেলি। আমাদের ফাইলে নির্দিষ্ট সংকেত দেওয়া থাকে এজন্য অফিসাররাও সে ফাইল আটকায় না। এছাড়া আমরা নিয়মিত থানা পুলিশকেও ম্যানেজ করে চলি, তাই আমাদের কেউ বাধা দেয় না।

এ বিষয়ে তেঘরিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নূরনবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা এলাকার ছেলে হিসেবে টুকটাক কাজ করি। তবে ৪০২ নং রুমের ডিসপাস শাখায় কর্মরত মো. মামুন নিজেও দালালি করে, আবার তার নিযুক্ত মনির ও জয় নামে দুইজন দালাল রয়েছেন।

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক শাহ মুহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহর বাংলানিউজকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসের বাইরে যদি কোনো দালাল থাকে সেটা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। তবে অফিসের ভেতরে যদি কেউ জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।