ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মাপাড়ের নির্মল বিনোদনে দখলের থাবা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৮
পদ্মাপাড়ের নির্মল বিনোদনে দখলের থাবা অবৈধ দখলে সংর্কীণ হয়ে গেছে পথচারীদের হাঁটাচলার রাস্তা

রাজশাহী: ‘তিলোত্তমা’ রাজশাহী নগরীর মানুষের অবসর সময় স্বস্তিতে কাটানোর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হচ্ছে পদ্মারপাড়। দিন শেষে কিছুটা প্রশান্তির আশায় মানুষ ছুটে যায় নদীপাড়ে। তবে পদ্মাপাড়ের বিনোদনের জায়গাগুলোর এখন বেহাল দশা।

শহরের দক্ষিণে থাকা পদ্মাপাড়জুড়েই চলছে অবৈধ দখলের প্রতিযোগিতা। পদ্মাপাড় দখল করে অসংখ্য অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,টিনের ঘর গড়ে উঠছে।

যত্রতত্র ছড়ানো-ছিটানো ময়লা-আবর্জনায় ম্লান হচ্ছে সৌন্দর্য। অবৈধ দখল, সংস্কার ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনদিন নগরবাসীর কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে পদ্মাপাড়।

দীর্ঘদিন ধরে এমন হাল হয়েছে পদ্মাপাড়ের। এরপরও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নদীপাড়ের রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই সিটি করপোরেশনের।  

রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন পদ্মাপাড়কে সাজিয়ে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। নগরবাসীর বিনোদনের কথা মাথায় রেখে নগরীর পঞ্চবটি শ্মশানঘাট, লালন শাহ পার্ক, পদ্মা গার্ডেন ও টিআই বাঁধের সৌন্দর্যবর্ধনেরও কাজ করা হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছরে নদীপাড়ের মনোরম সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, পদ্মাপাড়ের এলাকা অবৈধভাবে দখল করে গড়ে উঠেছে নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অসংখ্য স্থায়ী ও ভাসমান দোকানপাট পুরো পাড়জুড়ে গেঁড়ে বসেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকা দখল করে এলাকাবাসী বেশকিছু টিনশেড ঘর তুলে সেখানে দিব্যি বসবাস করেছেন। এসব টিনশেড ঘরের কারণে পদ্মা গার্ডেনের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। লালন শাহ মুক্তমঞ্চের একটু দূরেই তৈরি করা হয়েছে গরুর খামার। গরুর বিষ্ঠা ও খামারের আবর্জনা থেকে উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের স্থান, লালন শাহ মুক্ত মঞ্চসহ পার্কের অধিকাংশ জায়গা আবর্জনায় ভরা। পদ্মাপাড় দখল করে নামে বেনামে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রেস্তোঁরা।  

স্থানীয়দের অভিযোগ, পদ্মারপাড়ের জায়গা দখলে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। পুরো পদ্মাপাড়জুড়ে এমন দখলের প্রতিযোগিতা চললেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না রাজশাহী সিটি করপোরেশন।  

পাড়জুড়ে গড়ে তোলা টিনশেড ঘরে চলে বখাটে ও ছিনতাইকারীদের আড্ডা, জুয়া খেলা। রাতে ছিনতাইকারীদের ভয়ে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে যায়। ফলে রাত নামলেই ওই এলাকায় অনেকটা ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে।

অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব দোকানপাটের বিরু্দ্ধে সিটি করপোরেশনও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে নাপদ্মারপাড়ে ঘুরতে আসা শফিকুল ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, পদ্মাপাড়ের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। পদ্মাপাড়ের ময়লা-আবর্জনা যথাসময়ে পরিষ্কার না করায় সন্ধ্যা হলে শুরু হয় মশার উৎপাত। যত্রতত্র গড়ে তোলা স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাট ও টিনের ঘরের কারণে জায়গা কমে আসায় হাঁটাচলা করাই দায়।  

এভাবে নদীর পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও সিটি করপোরেশনকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এমনকি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষই নদীর পাড় দখল করে ইজারা দিচ্ছে।

তবে পদ্মারপাড় দখল সম্পর্কে জানতে চাইলে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে কিছু জায়গা সৌন্দর্যবর্ধন করে সেগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে।

দখলমুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গা দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে নব নির্বাচিত সিটি মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার আগে পদ্মাপাড় নিয়ে করপোরেশনের পক্ষ থেকে আর কিছু চিন্তাভাবনা করা যাচ্ছে না। নির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করলে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৮
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।