ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কাউন্টারে মলমূত্র, লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে শঙ্কা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৮
কাউন্টারে মলমূত্র, লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে শঙ্কা লঞ্চের টিকিট বিক্রির জন্য কাউন্টারগুলোর ভেতরে পড়ে আছে ময়লা-আবজর্না

সদরঘাট ঘুরে: আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে লঞ্চগামী যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কাউন্টারের মাধ্যমে টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হবে কি-না সে বিষয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। উপরন্তু কাউন্টারগুলোর ভেতরে ও আশেপাশে দুর্গন্ধ ও মলমূত্রের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা গেছে।

গত দুই বছর ধরে নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সুবিধার্থে দুই ঈদে বাস আর ট্রেনের মতো লঞ্চেরও অগ্রিম টিকিট বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। এজন্য সদরঘাটে অবস্থিত ঢাকা নদী বন্দরের নব-নির্মিত ২ নং টার্মিনালের (বরিশালগামী লঞ্চের টার্মিনাল) শেষ অংশে নিচ তলায় বেশ কিছু কাউন্টার নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষ।

এবং প্রতিটি শিপিং কোম্পানির কাছে একটি করে কাউন্টার লিজ দেওয়া হয়। সে হিসেবে প্রতি বছর লিজের নির্দিষ্ট টাকাও পরিশোধ করে লঞ্চ কোম্পানিগুলো।

কিন্তু যে কাজের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে সে কাজই হচ্ছে না। উপরন্তু বিভিন্ন ঝামেলায় অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে জায়গাটুকো।  

জানা যায়, ‘লঞ্চের অগ্রিম টিকিট কাউন্টারে বসে বিক্রি করা হবে’ নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের এমন ঘোষণার পর কেবল একবার এখানে লঞ্চের প্রতিনিধিরা নামেমাত্র টিকিট নিয়ে বসেছিলেন, তাও আবার কয়েক ঘণ্টার জন্য। এরপর সারাবছর বাদ দিয়ে কেবল দুই ঈদে কাউন্টারে বসে যতটুকো সম্ভব টিকিট বিক্রির আহ্বান জানালেও তাতে কান দেন না লঞ্চ মালিকরা। ঢাকা নদী বন্দর, বিআইডব্লিওটিএ এমনকি নৌমন্ত্রীর বেশ ক’বার অনুরোধেও গত ঈদুল ফিতরে কাউন্টারে বসেননি তারা।  

অভিযোগ রয়েছে, সারা বছর কোম্পানিগুলো এসব কাউন্টারের কোন খোঁজ না রাখায় নিত্যদিন এই স্থানটিতে মাদকসেবীরা আড্ডা জমায়। এসব কাউন্টারে বসেই জুয়া ও মাদকসেবন করেন তারা। অনেকে আবার বিশেষ প্রয়োজনীয় কাজটির সমাধাও করেন এসব কাউন্টারে। ফলে দুর্গন্ধে পারতপক্ষে কেউ এমুখো হন না।  
 
বুধবার (০৮ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রির জন্য স্থাপিত কাউন্টারগুলোর কোনটিতেই কোন লঞ্চের প্রতিনিধি নেই। তবে আগে এসব কাউন্টারের দরজা অহর্নিশ খোলা থাকলেও এর বেশিরভাগ বন্ধ রেখেছেন কাউন্টার মালিকরা। বাদবাকি অবস্থা যা হওয়ার তাই হয়েছে। বেশ ক’টি কাউন্টারের ভেতরে ময়লা, আবর্জনা, মূত্র দেখা যায়। আর কাউন্টারগুলোর সামনে মলমূত্রের ছড়াছড়ি, উটকো গন্ধে টেকা দায়! 

তবে এই ব্যাপারে বিআইডব্লিওটিএ বা লঞ্চ মালিক কেউই দায় নিতে ইচ্ছুক নয়। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, কাউন্টার সংলগ্ন স্থান পরিষ্কার করার দায়িত্ব বিআইডব্লিওটিএ বা ঢাকা নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের। আবার নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, যেহেতু আমরা তাদের কাছে লিজ দিয়ে দিয়েছি তাই এসব স্থানের সম্পূর্ণ দায়ভার তাদের (লঞ্চ কোম্পানির)।  

দু’পক্ষের ঠেলাঠেলিতে উপযুক্ত পরিবেশের দেখা পায়না কাউন্টার ও এ সংলগ্ন স্থানগুলো।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লঞ্চের ম্যানেজার বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমত লঞ্চের টিকিট খুব সীমিত, যা লঞ্চে বসে বা ফোনেই বিক্রি হয়ে যায়। তাই কাউন্টারে বসে অযথা সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না। দ্বিতীয়ত, আমাদের যেসব জায়গা লিজ দেওয়া হয়েছে তার ব্যবহারের দায়িত্ব আমাদের থাকলেও পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষের। কারণ এর জন্য তো আমরা আলাদা সুইপার রাখবো না, বন্দরের সুইপারই এসব পরিষ্কার করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) আলমগীর কবির বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে যাদের টিকিট শতভাগ অনলাইনে বিক্রি হয়। তাছাড়া ডেকের টিকিট তো আর অগ্রিম বিক্রি করা সম্ভব হয় না, লঞ্চের খুব অল্প টিকিট যা কোম্পানিগুলো লঞ্চে বসেই বিক্রি করতে পারে। তাই সহজে কাউন্টারে তারা বসতে চায় না। এরপরেও আজ আমরা বসবো, দেখি একটা ডিসিশন হবে কবে থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে।

কাউন্টারের বিষয়ে তিনি বলেন, কাউন্টার তো আমরা লিজ দিয়েই দিয়েছি, এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাই কোম্পানির উপরেই বর্তায়। এরপরেও আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সবসময় এসব স্থান পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৮
কেডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।