ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুই মাস ধরে অচেতন শিশু লিয়ন, অসহায় মায়ের কান্না

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৮
দুই মাস ধরে অচেতন শিশু লিয়ন, অসহায় মায়ের কান্না দুই মাস ধরে অচেতন অবস্থায় রয়েছে শিশু লিয়ন

ঠাকুরগাঁও: গত ১৮ মে বাড়ির পাশে উঁচু গাছের ডালে থাকা পাখির বাসা থেকে একটি পাখির বাচ্চা পড়ে যায়। পাখিটির অসহায় চিৎকার শুনতে পায় ১১ বছরের লিয়ন। অন্যরা এড়িয়ে গেলেও লিয়ন পাখির বাচ্চাটি উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দিতে গাছের মগডালে উঠতে শুরু করে। একপর্যায়ে পা ফসকে গাছ থেকে নিচে পড়ে যায় সে। এতে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার। প্রায় দুই মাস ধরে অচেতন অবস্থায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে দিন কাটছে তার।

এদিকে, অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছেন মা মুক্তা রানী।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার সরকারপাড়ার বাসিন্দা মুক্তা রানী দর্জির কাজ করে দুই সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে দিনযাপন করছিলেন। অনেক আগেই স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে।

লিয়নের বোন নূপুর বাংলানিউজকে জানায়, ‘লিয়ন সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। সে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তারপর থেকে আর জ্ঞান ফিরে আসেনি। সে হাসপাতালে শয্যায় শুয়ে থেকে মাঝে মাঝে হাত-পা নাড়লেও অথবা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেও কোনো কথা বলে না। কিছু খেতে পারছে না। এ অবস্থায় তার নাকের ভেতর দিয়ে নল ঢুকিয়ে প্রতিদিন তরল খাবার ও ৭শ থেকে ৮শ টাকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
লিয়নের নাকে নল ঢুকিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হচ্ছে
‘কিন্তু আমার মা অর্থের অভাবে না পারছেন ভাইয়ে চিকিৎসার খরচ যোগাতে, না পারছেন চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতেন। আমি আমার ভাইকে আগের মতো ফিরে পেতে চাই। আপনারা আমাদের সাহায্য করুন। ’

পাশের বাড়ির জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিশু লিয়ন অনেক চঞ্চল একটি ছেলে। সে পাখি খুব ভালোবাসে। একটি পাখির বাচ্চা গাছ থেকে মাটিতে পড়ে গেলে বাচ্চাটি গাছের ডালে ওপরে বাসায় পৌঁছে দিতে গিয়ে পড়ে যায় সে। এতে তার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে। ’

তিনি আরও বলেন ‘অসহায় মা ছেলের চিকিৎসার জন্য এরইমধ্যে ঘরের ঘটি-বাটি বিক্রি করেছেন। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে অনেক ঋণ করে ফেলেছেন তিনি। এখন হাসপাতালে মা-ছেলের অসহায় অবস্থা দেখে কেউ সাহায্য-সহযোগিতা করলে ছেলের ওষুধ বা খাবার কিনতে পারেন, নতুবা চোখের পানি ফেলে হাত পাতছেন লোকজনের কাছে। ’

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (কনসালটেন্ট) ডা. শাহ্জাহান নেওয়াজ জানিয়েছেন, শিশু লিয়নকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে অপারেশনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ্য করা সম্ভব।

এমতাবস্থায় শিশু লিয়নের মা ছেলের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সমাজের হৃদয়বান, দানশীল ও বিত্তবান মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।