মঙ্গলবার (০৭ আগস্ট) রাতে রাজধানীর পূর্বাচল এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি ট্রাসহ ২ লাখ ৬ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এ সময় কাভার্ড ভ্যানের চালক মো. মানিক মিয়া (২৭) ও হেলপার মো. আরিফ (২২) এবং ট্রাকের চালক মো.মাসুম মিয়া (৪০) ও হেলপার মো. আব্দুল খালেককে (২৮) আটক করা হয়।
পরে বুধবার (০৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন>>
** আইন অমান্য করে খালেদার জবানবন্দি প্রকাশ
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত লবণবহনকারী ট্রাকগুলোকে ইয়াবা পরিবহনে টার্গেট করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ায়।
‘এরই প্রেক্ষিতে পূর্বাচল এলাকায় অভিযান চালিয়ে লবণবোঝাই একটি কাভার্ড ভ্যান ( ঢাকা মেট্রো-ট-২২-২৯২৭) ও একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-২২-০২৮০) আটক করে র্যাব-১। ’
তিনি জানান, পরে কাভার্ড ভ্যান থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার পিস এবং ট্রাকের অতিরিক্ত চাকার ভেতর থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ সর্বমোট ২ লাখ ছয় হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৭ কোটি ২১ লাখ টাকা।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ইয়াবাগুলো সমুদ্র পথে মিয়ানমার থেকে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মহেশখালী হয়ে চকোরিয়ায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে ট্রাক চালক মাসুম এসব ইয়াবা চকোরিয়ার সিন্ডিকেট থেকে গ্রহণ করেন। সিন্ডকেটটি গত ২৮ জুলাই টেকনাফ থেকে লবণ লোড করে অপেক্ষা ও সুযোগ খুঁজতে থাকে।
‘চলতি মাসের ৩ তারিখে টেকনাফ থেকে ঢাকায় রওনা হয় এবং রফিক নামের এক দালালের ছক অনুযায়ী চকোরিয়ায় গাড়ি মেরামতের অজুহাতে পূর্ব নির্ধারিত একটি ওয়ার্কশপে যাত্রা বিরতি করে। ওই সময় কাভার্ড ভ্যানে বিশেষ গোপনীয়তায় চালানটি রাখা হয়। এছাড়া ট্রাকের অতিরিক্ত চাকার ভেতর আরও ১০ হাজার পিস ইয়াবা লুকানো হয়। ’
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ইয়াবা সংরক্ষণ শেষে প্রথমে ট্রাক নিয়ে মাসুম ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন, এর তিন-চার ঘণ্টা পর মানিক কাভার্ড ভ্যান নিয়ে এগোতে থাকেন। পরিকল্পনা ছিল সামনের ট্রাক ধরা পড়লেও পেছনের কাভার্ড ভ্যানে রক্ষিত বড় চালানটি যেন রক্ষা পায়।
তিনি বলেন, আটক চারজনই গাড়ি চালাতে জানলেও তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক লাইসেন্স নেই। এ চক্রটির সদস্য ১৫ থেকে ২০ জন। তারা গাড়ি চালানোর ছদ্মবেশে মাদকের ব্যবসা করতো। গত ১ বছর ধরে আটকরা এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর আগে তারা আটটি চালান পাচার করে। এ চক্রটির মাদক পরিবহনের বিষয়টি নিযন্ত্রণ করে টেকনাফের দালাল রফিক।
আটকরা জানান, পরিবহন সেক্টরে এ ধরনের আরও বেশকিছু সিন্ডিকেট রয়েছে। কক্সবাজারের স্থানীয় কিছু দালাল মাদক ডিলারদের যোগসাজশে পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীদের মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের গাড়িতে ইয়াবা রাখার জন্য প্রলুব্ধ করে।
মুফতি মাহমুদ বলেন, কেরানীগঞ্জে লবণ নামানোর পর বসিলা এলাকায় কাভার্ড ভ্যান থেকে বিশেষভাবে রাখা ইয়াবাগুলো বের করে তিনজনের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে পাঁচ মাদক ব্যবসায়ীর কাছে হস্তান্তর করারা টার্গেট ছিলো তাদের।
তিনি বলেন, গত ২৫ জুলাই টেকনাফের র্যাবের অতিরিক্ত পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপনের ফলে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইয়াবা সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিত্য নতুন রাস্তায় ইয়াবা সরবরাহ করার পরিকল্পনা করে। সমুদ্রপথে মহেশখালী হয়ে চকোরিয়াসহ বিভিন্ন ল্যান্ডিং স্টেশন দিয়ে ইয়াবা চালানের নতুন রুট তৈরি করেছে। বিভিন্ন ল্যান্ডিং স্টেশন সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য আছে এবং নজরদারির ফলে ধরাও পড়ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ বলেন, ইয়াবা চালান ল্যান্ডরুটে অনেকটা কন্ট্রোল হলেও সি-রুটে তা হয়নি। সেখানে হাজার হাজার ফিশিং ট্রলার রয়েছে, ওখানকার ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সমুদ্র অনুকূল-প্রতিকূল বলে কিছু নেই। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছে।
মাদকের গড ফাদারসহ সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৮
পিএম/এমএ