তিনি বললেন, ‘বেশিরভাগ বাসের ফিটনেস সনদ ও কাগজপত্র ঠিক নেই। আবার কোনো কোনো বাসের ফিটনেসও মেয়াদোত্তীর্ণ।
শাহীনের কথায় সমর্থন দিয়ে এনা পরিবহনের একটি বাসের সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কাগজপত্রে এতোদিন মালিকরা গুরুত্ব দেননি। চালকরাও নিজেদের লাইসেন্স নবায়ন করেননি।
‘সবকিছুই এমন কঠিন হয়ে যাইবো, এইড্যা (এটি) তো কেউ জানতো না। বাসের ফিটনেস নিতে হইলে মালিকরে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচা করতে হইবো। এই খরচে কে যাইবো (যাবে)?’, যোগ করলেন সাইফুল।
সোমবার (০৬ আগষ্ট) বিকেলে বাসস্ট্যান্ডে বসে আলাপ চলছিল তাদের সঙ্গে। ঘণ্টাখানেক এই বাস টার্মিনালে অবস্থান করে দেখা গেলো, সীমিত আকারে ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে বাস চলাচল শুরু হলেও এনা ও সৌখিন এক্সপ্রেসের কাউন্টার বন্ধ রয়েছে।
টার্মিনালে প্রবেশ করতেই লম্বালম্বিভাবে রাখা এনা পরিবহনের বাসগুলোর পাশেই মাস্টাররা অবস্থান করে টিকিট দিচ্ছেন। আবার যাত্রীর সংখ্যাও হাতেগোনা। আতঙ্ক পুরোপুরি না কাটায় যাত্রীরা সড়কমুখী হচ্ছেন না এমন কথাও জানান এই পরিবহনেরই এক হেলপার।
আলাপচারিতায় কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধভাবে রাখা এনা ও সৌখিন এক্সপ্রেসের কয়েকটি বাস দেখিয়ে নাম গোপন রাখার শর্তে এক টিকিট মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, কাগজপত্রে ঝামেলা আছে এমন বাসগুলো সেখানে রাখা হয়েছে। আর বৈধ কাগজপত্র আছে এমন বাসগুলোকে লম্বালম্বিভাবে টার্মিনালের প্রবেশমুখেই রাখা হয়েছে।
এনা ও সৌখিন এক্সপ্রেসের টিকিট মাস্টাররা জানান, সকাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২টি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এসব বাসের কাগজপত্র বা চালকের লাইসেন্স নিয়ে কোনো জটিলতা নেই।
এনা কাউন্টারের লাইনম্যান মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির নেতাদের বাসের বেশিরভাগেরই ফিটনেস সনদ নেই। চালকেরও ভারী লাইসেন্স নেই। এগুলো ঠিক করতে সময় লাগবে। রাতারাতি সব ‘ওকে’ করা সম্ভব না।
তার সঙ্গে আলাপের সময়ই মোবাইল ফোনে কথা বলে ‘হনহন’ করে ছুটে যাচ্ছিলেন সৌখিন এক্সপ্রেসের হেলপার আসাদুল (৩৫)। বেজার মুখে আরেকজনকে ফোনে বলছিলেন, ‘ওস্তাদের (চালকের) তো হেভি (ভারী) লাইসেন্স নাই। বাইর অইলে (বের হলে) কী আটকাইবো (আটকাবে)?’
পরে আসাদুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোবাইলে জানাইলো হেভি (ভারী) লাইসেন্স ছাড়া বাইর অইলে সোজা হ্যান্ডকাপ। রিস্ক লওন (নেওয়া) যাইবো (যাবে) না। ’
ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে বাস চলাচল কম থাকার বিষয়ে এনা পরিবহনের একটি বাসের সুপারভাইজার হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়েছে। এই আইন নিয়ে সব চালক-শ্রমিকের মন খারাপ। এজন্য অনেক চালক-শ্রমিক স্ট্যান্ডে আসেনি। আবার যাত্রীও কম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও এক’দু’দিন সময় লাগবে।
চালকের লাইসেন্স ও বাসের ফিটনেস সনদ না থাকার বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব সৈয়দ মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে সমিতির বাস বিভাগের সম্পাদক বিকাশ সরকারেরও।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৮
এমএএএম/টিএ