ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে কতদিন জিম্মি থাকবো’

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৮
‘পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে কতদিন জিম্মি থাকবো’ ময়মনসিংহের বাস কাউন্টারগুলোও ফাঁকা। ছবি: বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: নিরাপত্তার কারণে নিত্যদিন লোকাল বাস চেপে ত্রিশাল উপজেলার কর্মস্থলে যান স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। কিন্তু গত চারদিন ধরে বাড়তি ভাড়া আর ঝুঁকি নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যেতে হচ্ছে তাকে। 

অতিরিক্ত পয়সা খরচ আর যানবাহন সংকটে স্বভাবতই মন-মেজাজ ঠিক নেই এই শিক্ষকের। বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে আর কতদিন জিম্মি থাকতে হবে আমাদের।

সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। দিন যতো গড়াচ্ছে তারা ততই আগ্রাসী ও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছে। ’ 

শহরের চরপাড়া মোড় এলাকায় রোববার (০৫ আগস্ট) সকালে তার সঙ্গে যখন কথা হয়; তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি চাকুরে জয়নাল আবেদিনও ।  

ওই শিক্ষকের সঙ্গে আলাপের সূত্র ধরেই পাশ থেকে তিনিও বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকরা সব সময় বোঝাতে চান তারা চাইলেই দেশ অচল হয়ে যায়। বারবার তারা এই দুঃসাহস দেখান। সরকারে থেকে তাদের নেতা সরকারের বিরুদ্ধেই বারবার অবস্থান নেন। তারা হুশ করে গাড়ি চালান না। সড়ক সন্ত্রাস চালান। ’

তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই তারা চাপ তৈরি করতে পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে ভীতিকর ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এভাবে আর কতদিন? 

জানা যায়, যানবাহনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে বৃহস্পতিবার (০২ আগস্ট) সকাল থেকে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব রুটের ঢাকামুখী বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে জেলা পরিবহন মটর মালিক সমিতি। আবার শনিবার (০৪ আগস্ট) থেকে অভ্যন্তরীণ সড়কেও বন্ধ রয়েছে বাস চলাচল।  

রোববার চতুর্থদিনের মতো ময়মনসিংহ থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে দুর্ভোগ-ভোগান্তি। শহরের মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও পাটগুদাম ব্রিজ মোড় বাসস্ট্যান্ডের সব কাউন্টার বন্ধ রয়েছে।

একেবারেই ফাঁকা হয়ে আছে এই দুইটি স্ট্যান্ড। চালক-শ্রমিকদেরও দেখা মিলছে অনেকটাই কালেভদ্রে।

গণপরিবহনের এমন সঙ্কটে ‘ত্রাহি-ত্রাহি’ অবস্থা শহরের বাসিন্দা থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীদেরও।  

কাঙ্ক্ষিত গণপরিবহন না থাকায় জরুরি যাত্রা বাতিল করছেন অনেকেই। আবার দুর্ভোগ ও বাড়তি ভাড়া মেনেই অটোরিকশা, লেগুনায় চড়ে পথ চলছেন কেউ কেউ। এসব পরিবহনের চালকেরাও সুযোগ বুঝে যাত্রীদের ‘পকেট’ কাটতে কালবিলম্ব করছে না।  

সাপ্তাহিক ছুটিতে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে বাসায় এসেছিলেন জোবায়েদ হোসেন। প্রথম দিকে নাইট কোচ সার্ভিস চালু থাকলেও পরবর্তীতে সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে গত দু’দিন ধরে হাত গুটিয়ে বাসাতেই শুয়ে-বসে থাকতে হচ্ছে তাকে।  

অথচ অফিস থেকে বার বার ফোন আসছে। শেষ পর্যন্ত চাকরি টিকে কি-না এ নিয়েই চরম শঙ্কায় কাটছে তার দিন। ক্ষোভ নিয়ে জোবায়ের বাংলানিউজকে বলেন, ‘ট্রেনে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু টিকিট নেই। পা ফেলারও জায়গা নেই। রিজার্ভ ছাড়া প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসও পাওয়া যাচ্ছে না। ভাড়াও চাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত। ’ 

অভ্যন্তরীণ সড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই চাকরিজীবীদেরও। পাটগুদাম ব্রিজ মোড় বাসস্ট্যান্ড থেকে ধোবাউড়ার উদ্দেশে যাওয়া বাসে প্রতিদিন ছুটে চলতেন এক সরকারি চাকুরে।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে দু’দিন অফিস করলাম। আজ সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। এতোদূর সিএনজিও (অটোরিকশা) যেতে চায় না। এমন দুর্ভোগ নিয়ে আমরা আর কতদিন চলবো? পরিবহনের শ্রমিকদের হাত থেকে রক্ষার কী কোনো সুযোগই নেই?’ 

তবে এসব বিষয়ে যোগাযোগের জন্য ময়মনসিংহ জেলা পরিবহন মটর মালিক সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন মন্তা ও মহাসচিব সৈয়দ মাহাবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তারা তা রিসিভ করেননি।  

তবে সমিতির বাস বিভাগের সম্পাদক বিকাশ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘সড়কে বাস নামালে শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করছে। একদিকে মালিকরা লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছেন, অন্যদিকে চালক-শ্রমিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকেন। এখানে সমিতি বা মালিকদের পক্ষ থেকে যাত্রীদের জিম্মি করার প্রশ্নই ওঠে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সমিতির নির্দেশনা মোতাবেক যান চলাচল স্বাভাবিক হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৮ 
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।