ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাস্তায় পরিবহন নেই, জনভোগান্তি চরমে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৮
রাস্তায় পরিবহন নেই, জনভোগান্তি চরমে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং করে রাখলেও পরিবহন কোম্পানিগুলো যাত্রী পরিবহন করছে না। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত কয়েকদিনের ছাত্র বিক্ষোভের জের ধরে এবার ‘অঘোষিত ধর্মঘট’ ডেকে পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।   

শনিবারও (০৪ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন রুটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা ছাড়ছে না দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী দূর-পাল্লার বাসও।

 

কোনো ধরনের কর্মসূচি না থাকলেও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কে ভাঙচুরের কারণে পরিবহন শ্রমিকরা বাস চালাতে চাইছেন না। তবে মালিকরা-ই বাস নামাতে দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।  

শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর সড়কে কোনো বাস চলাচল করছে না। প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা আর রিকশায় করেই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। সিএনজি অটোরিকশা আর রিকশার অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে আবার রওয়ানা দিয়েছেন পিকআপ ভ্যানে চড়ে।  

সড়কের পাশেই গণপরিবহন পার্ক করে রাখলেও মানুষের আসা-যাওয়ার জন্য তা চালাচ্ছেন না মালিক-পরিবহন শ্রমিকরা।  

রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, ফার্মগেট, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, প্রগতি সরণি, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার চিত্র এটি। পিকভ্যানে চড়ে উত্তরার অফিসে যাচ্ছেন বেসরকারি একটি কোম্পানির কর্মচারী আবদুল হাই।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ছাত্ররা তো এখন আন্দোলনে নাই। এরপরও বাস চলে না কেন?

তার সঙ্গে যোগ করে টঙ্গী হাসপাতালের কর্মকর্তা সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এটা হয়তো পরিবহন মালিকরা চায় না। কারণ ছাত্রদের দাবি মেনে নিলে তারা যাচ্ছেথাই ভাবে সড়কে চলতে পারবে না। আর এ জন্যই অঘোষিত ধর্মঘট ডেকেছে। ’

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের রেষারেষিতে একটির চাপা পড়ে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পর বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা।  

এরপর কিছু গাড়ি ভাঙচুর হয়। রাস্তায় শিক্ষার্থীরা চালক ও গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশি করে; এক পর্যায়ে ‘ভাঙচুরে’র কথা বলে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন মালিক-শ্রমিকরা।  

পরে গত বৃহস্পতিবার (০২ আগস্ট) সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে তাদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। প্রথমে দুয়েকটি চললেও শুক্রবার (৩ আগস্ট) থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় বাস চলাচল।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ছাত্ররা বাস ভাঙচুর করছে এজন্য বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে

কবে নাগাদ স্বাভাবিক হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্ররা ভাঙচুর বন্ধ করুক, বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

এদিকে শুক্রবারের মতো শনিবার সকালেও ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়তে দেখা যায়নি।  

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী স্টার লাইন পরিবহনের নর্দ্দা এলাকার কাউন্টারের ম্যানেজার সোলায়মান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এ অবস্থায় চলাচল নিরাপদ নয়, তাই আপাতত বন্ধ রয়েছে।  

মহাখালী বাস টার্মিনালে ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটের এনা পরিবহনের সহকারী ব্যবস্থাপক উজ্জল দস্তিদার বলেন, উপরের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।  

বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড় রুটের বাস সার্ভিস। ওই রুটে গাবতলী থেকে হাতে গোনা দুই-একটি বাস চললেও সেগুলো সাভার পর্যন্ত যাচ্ছে, আবার ভাড়াও নিচ্ছে বেশি।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুর রহমান পিটার বলেন, শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। তবে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী। মূলত তারাই বাসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। তাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।  

‘সাধারণ যাত্রীদের হয়রানির কথা ভেবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সব রুটে বাস চলবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যখন তাদের আন্দোলন বন্ধ করবে, সেই মুহূর্ত থেকেই আবারো নিয়মিত বাস চলাচল করবে। ’ 

খুলনা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী একটি বাসের শ্রমিক জানান, বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।  

নতুন আইন করে সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান হলে তা পরিবহন শ্রমিকরা মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।

এদিকে ‘অঘোষিত’ পরিবহন ধর্মঘটে সমস্যায় পড়েছেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ। শনিবার সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন সংকটে দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। নগরসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন রাস্তায় চলাচল করছে না। মাঝে মধ্যে একটি বাস এলেই নেমে পড়ছেন সেখানে ওঠার যুদ্ধে!

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৮/আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।