ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রংপুরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে মহাসড়কে শিক্ষার্থীরা

বেরোবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৮
রংপুরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে মহাসড়কে শিক্ষার্থীরা রংপুর-ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রংপুরের শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর:  রাজধানীতে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিচার, নিরাপদ সড়কসহ নয় দফা দাবি আদায়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে রংপুরের শিক্ষার্থীরা। 

বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) দুপুরে পুলিশের বাধা উপক্ষা করে নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক দফায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এতে রংপুর-ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

 

শিক্ষার্থীদের পূর্ব ঘোষিত এই কর্মসূচির কথা জেনে সকাল থেকেই নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে অবস্থান নেয় পুলিশ। তারা শিক্ষার্থীদের কোথাও একত্র হতে না দেওয়ার চেষ্টা করলেও রংপুর টাউন হল প্রজন্ম চত্বরে একজোট হয়ে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

হাজার হাজার শিক্ষার্থীর উত্তাল স্লোগানে মুখরিত মিছিলটি নগরীর জিলা স্কুল মোড়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে পৌঁছলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেখানে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন সমাবেশ শুরু করলে আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও তাতে যোগ দেয়। মানববন্ধন শেষ না করেই বিশাল একটি মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে শাশ্বত বাংলা হয়ে মেডিকেল মোড় এলাকায় গিয়ে রংপুর-ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তারা সাধারণ জনগণকে আন্দোলনে সিক্ত করে। শিক্ষার্থীদের ফুলে ফুলে সিক্ত হয় পুলিশ সদস্যরাও।  
রংপুর-ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রংপুরের শিক্ষার্থীরা।  ছবি: বাংলানিউজ
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের জোরালে স্লোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে আসেন সাধারণ মানুষরাও। এসময় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে সংহতি জানান।

‘চাইলাম বিচার পাইলাম ছুটি’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘জাগো বাহে কোনটে সগায়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে অপরাধী বাহিরে’ লেখা প্ল্যাকার্ডসহ নয় দফা দাবি আদায়ের পক্ষে শত শত পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মহাসড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এতে পুরো মহাসড়কে যানবাহন চলাচল থমকে যায়। দীর্ঘ হতে থাকে আটকে পড়া গাড়ির বহর। দুপুর সাড়ে এগারোটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে উত্তরের জেলা দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীরা এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত গাড়িসহ জরুরি পরিবহনগুলো পারাপারে সহযোগিতা করেন। তারা নিজেরাই বৃদ্ধ, শিশু, অসুস্থ নারী-পুরুষ ও সাধারণ যাত্রীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপার করিয়ে দেন। শিক্ষার্থীদের অনেকেই সেখানে বাস, পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশার চালককে বেপরোয়ারাভাবে যানবাহন না চালানোর পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখার এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য আহ্বান জানান।  

নিরাপদ সড়কের দাবিতে গর্জে ওঠা এই আন্দোলনে রংপুর জিলা স্কুল, রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীর উত্তম শহীদ সামাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, রংপুর ডেন্টাল কলেজ, আরসিসিআই স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ নগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেন।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রবিউল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হায়াত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু মারুফ হোসেন, ফজলে এলাহি, সাইফুর রহমান সাইফ, রংপুর কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) মোক্তারুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৮
এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।