পাশের বাড়িতেই তাঁতশ্রমিকের কাজ করছিলেন। বর্ষার পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিবেশী সাত্তারের টঙ দোকানঘর সরানোর জন্য তিনিসহ আরও তিন তাঁতশ্রমিক এবং অন্যান্যরা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন।
মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাদাই গ্রামে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে নিহত হাবিবের বাড়িতে চলছিল শোকের মাতম। একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন বাবা আবুল হোসেন ও মা হেনা খাতুন। দেড় মাসের শিশু সন্তান রাফিকে কোলে নিয়ে বিরামহীন কান্নায় আকাশ-বাতাশ ভারি করে তুলেছিলেন হাবিবের স্ত্রী রুনা খাতুন। শান্তনা দিতে স্বজনেরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না।
হাবিবের শাশুড়ি কোহিনুর খাতুন চিৎকার করে শুধু বলছিলেন, অবুঝ শিশুর কাছ থ্যাইক্যা বাবারে কাইরা নিলো আল্লায়। ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনা অইলো না হাবিবের।
নিহত হাবিবের মামা নূরনবী ও চাচা মনিরুল বলেন, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন হাবিব। আরও দু’টি মেয়ে ছিল তাদের। হতদরিদ্র বাবা আবুল হোসেন মনোহরী দোকান চালিয়ে খুব কষ্টে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। পড়ার খরচ যোগাতে না পেরে অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর হাবিবকে দুবাই পাঠিয়ে দেন। টানা ছয় বছর দুবাই চাকরি করে বেশকিছু টাকা রোজগার করেছিল সে। দেশে ফিরে এসে সুন্দর করে একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে। কঠোর পরিশ্রমী হাবিব দেশে আসার পরও বসে থাকেনি। গ্রামেরই একটি ফ্যাক্টরিতে তাঁতশ্রমিকের কাজ করছিল। ১ বছর আগে বিয়েও করে। বাবা-মা-বোন ও স্ত্রীকে নিয়ে খুবই সুখের সংসার ছিল তাদের। প্রায় দেড় মাস আগে তাদের ঘর আলো করে রাফি নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
হাবিব আবারও মালয়েশিয়া যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তার ভিসা এসেছিল। আগামী সপ্তাহের কোনো একদিন ছিল তার ফ্লাইট। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস-একটি দুর্ঘটনাই পুরো পরিবারটিকে বরবাদ করে দিল।
কান্নাজড়িত কন্ঠে হাবিবের বাবা আবুল হোসেন বলেন, আমার ছেলের মতো ভালো ছেলে অত্র এলাকায় একটাও ছিল না। বাবা-মাকে সে খুব ভালবাসতো। পরিবারটিকে যত্ন করে গড়ে তুলছিল সে। এখন আমাদের বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বন রইলো না।
দুপুরে বর্ষার পানিতে ডুবে যাওয়া একটি টঙ দোকান উঠিয়ে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়ার সময় বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে স্পৃষ্ট হয়ে তিন ছাত্র ও চার শ্রমিকসহ আটজন নিহত হন। নিহতরা সবাই একই গ্রামের বাসিন্দা। সন্ধ্যায় নিহতদের জানাযা শেষে কাদাই কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
আরবি/