বুধবার (১ আগস্ট) ছিটমহল বিনিময়ের মাত্র তিন বছরে নাগরিকত্বের সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষগুলো। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মধ্যরাত থেকে দেশের সবচেয়ে বড় বিলুপ্ত ছিটমহল কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়াসহ ১১১টি বিলুপ্ত ছিটের মানুষ আয়োজন করেছে আনন্দ-উৎসবের।
ছিটমহল বিনিময়ের তিন বছর পূর্তিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দারা। এরমধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রতিটি বাড়িতে আলোকসজ্জা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১৮টি মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও ৩টি মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা।
ছিটমহলবাসীর এরইমধ্যে যেন ঘুচে গেছে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস। মাত্র তিন বছরের মাথায় ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো, প্রশস্ত মসৃণ পাকা রাস্তা, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সরকারি উদ্যোগে নির্মিত সুদৃশ্য মসজিদ-মন্দির, বিটিসিএল অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল সেন্টার, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা-এ যেন বদলে যাওয়া এক নতুন জনপদ দাসিয়ারছড়া।
দাসিয়ারছড়ার সাবেক পঞ্চায়েত প্রধান নজরুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, আব্দুল জলিল, নুর আলম মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, এখন তারা বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয় দিতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত। মাত্র তিন বছরে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রাপ্তি থাকায় খুশি বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ছিটবাসীরা দীর্ঘ ৬৮ বছরের লাঞ্চনা-বঞ্চনায় থেকে আন্দোলন করে স্বাধীন ভুখণ্ড পেয়েছি। আমরা বিলুপ্ত ছিটবাসীরা গত তিন বছর ধরে মুক্ত পাখির মতো জীবন কাটাচ্ছি। আমরা ছিটবাসীরা দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মঙ্গলবার ও বুধবার দিনব্যাপী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল, গ্রামীণ খেলাধুলা, মঙ্গলবার মধ্যরাতে ৬৮টি মোমবাতির পাশাপাশি ৪টি বড় মশাল প্রজ্জ্বলিত করবো। আমরা দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর কর্মসূচি পালন করতে চাই।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বাংলানিউজকে বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলের অবরুদ্ধ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। এছাড়াও গত তিন বছরে বিলুপ্ত ছিটমহলে সরকারি ও বে-সরকারিভাবে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং উন্নয়নের কাজ চলতে থাকবে।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের অভ্যন্তরে ৫১ বাংলাদেশি ছিটমহল বাংলাদেশ ও ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
এফইএস/আরবি/