ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ড্রেন সংস্কারের মাটির স্তূপে ‘হাসলো’ পাকা ধান

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
ড্রেন সংস্কারের মাটির স্তূপে ‘হাসলো’ পাকা ধান ড্রেনের জন্য খোঁড়া মাটিতে হওয়া ধানে পাক ধরলেও শেষ হয়নি ড্রেনের কাজ। ছবি/শোয়েব মিথুন

ঢাকা: ড্রেনের জন্য মাটি খুঁড়ে স্তূপ জমানো হয়, সেই স্তূপে পাখির খাবারের উচ্ছিষ্ট ধান ফেলেছিলেন দোকানি। সেই ধান থেকে চারা গজিয়েছে, গজিয়েছে ধানের শীষ। সময়ের ব্যবধানে এখন পাকও ধরেছে সেই। তবু সেই ড্রেনের কাজ শেষ করতে পারেনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। 
 

এই ‘অদ্ভুত’ চিত্র রাজধানীর মিরপুরের আরামবাগ আবাসিক এলাকার একটি সড়কের। পূরবী থেকে মিল্কভিটার পাশ দিয়ে রূপনগর আবাসিক এলাকায় গিয়ে ঠেকেছে সড়কটি।

 
 
কাজ যদি চলমান থাকতো তবু না হয় জনমনে স্বস্তি থাকতো। কাজও চলছে না। শুধু মাটি খুঁড়ে গর্ত করে রেখে চলে গেছেন ডিএনসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। ঠিক কবে নাগাদ আবার কাজ শুরু হবে, সে কথাও জানেন না এলাকাবাসী।  

মাটির স্তূপটি করা হয়েছে টর্ক অ্যাকুরিয়াম অ্যান্ড স্টেশনারিজের সামনে। এই দোকানটিতে বেচা-কেনা হয় নানান জাতের পাখি ও তাদের খাদ্য। দোকানি পাখিকে খাওয়াতেন এক প্রকার চীনা ধান। খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলেছিলেন সেই মাটির স্তূপে। আর তাতেই ধানগাছ, সর্বশেষ ঘরে তোলার মতো পাকা ধান!

দোকানি শরিফ ইসলাম বাংলানিউজকে বলছিলেন, মিল্কভিটার মোড় থেকে রূপনগর পর্যন্ত ড্রেনের জন্য খোঁড়া হয়েছে রোজার আগে। দোকান-বাসাবাড়ির ঠিক পাশ-ঘেঁষে গর্ত করায় চরম বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে। অনেকে রাস্তায় উঠতে কাঠের সিঁড়ি ও সাঁকো তৈরি করেছেন।
 
তিনিও কাঠের পাটাতন বিছিয়ে দোকান চালাচ্ছেন। কিন্তু তার ব্যবসার অবস্থা খারাপ। মাটির স্তূপ তার দোকানের ঠিক সামনে। বড়-সড়ো স্তূপ হওয়ায় দূর থেকে তার দোকান দেখাই যেতো না প্রথম দিকে। এখন বৃষ্টি-বাতাসে স্তূপ ক্ষয়ে গিয়ে কিছুটা দেখা গেলেও ক্রেতারা আসতে চান না। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। তখন হাঁটতে গেলেই কাদায় পা ঢুকে যায়।
 
শরিফ ইসলামের ভাষ্যে, এই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বেশি বিড়ম্বনায় রয়েছে অনির্বান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। লাল মাটি হওয়ার অল্প বৃষ্টিতেই কাদায় একাকার হয়ে যায় এলাকা। তখন হাঁটা-চলা করা যায় না। অনেক শিক্ষার্থী পা পিছলে পড়ে আহত হয়। আবার একটু রোদেই মাটি শুকিয়ে ধুলোময় হয়ে যায় এলাকা। তখন এসব এলাকায় বাসা-বাড়ির জানালা পর্যন্ত খোলা যায় না। কিন্তু কারোরই যেনো দায় নেই। না সিটি করপোরেশনের, না অন্য কারো।

 খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বেশি বিড়ম্বনায় রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।  ছবি/শোয়েব মিথুন
 
স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলছিলেন, ঢাকা শহরে এমন ‘বেওয়ারিশ’ সড়ক মনে হয় আর একটিও নেই। এই রাস্তায় যার যা খুশি, তাই করছে, দেখার কেউ নেই। একমাস হয় ডেসকোর (ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড) লোকজন এসে রাস্তার ঠিক মাঝবরাবর বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে রেখে গেছে। কবে কাজ করবে তার কোনো ঠিক নেই। অথচ তারা চাইলে একটু গোছালো করে রাখলে দুর্ভোগ অনেকটা কমে যেতো।
 
আবার এই পথের ধারেই রূপনগর থানার অবস্থান। দুর্ঘটনায় ‍দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া একটি পিকআপ ও একটি প্রাইভেটকার রাস্তার ওপর পাশাপাশি রেখে অর্ধেক রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যে কারণে অল্পতেই জট লেগে যাচ্ছে। থানা ও ট্রাফিক পুলিশও যেন দুর্ভোগ দেখছে না। অথচ থানা পুলিশ চাইলে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দু’টি আগে-পিছে রাখতে পারে। আবার ডেসকো কংক্রিটের খাম্বাগুলো সহজেই উপর-নিচ করে রাখতে পারে। আবার জায়গায়-জায়গায় মাটির স্তূপ না রেখে সরিয়ে নিলে ধুলা-কাদা শহরময় হতো না।

দুর্ঘটনায় ‍দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়িগুলো পাশাপাশি রাখার ফলে বন্ধ রয়েছে অর্ধেক রাস্তা।  ছবি/শোয়েব মিথুন 

সরকারি এই তিন প্রতিষ্ঠানের খানিক সদিচ্ছাই লাখো মানুষকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে বলে মনে করেন মনিরুজ্জামানের মতো স্থানীয় বাসিন্দারা।
 
এসব দেখভাল করার দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের। কিন্তু তারাই এলাকাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, অভিযোগ কার কাছে করবো, কার কাছে চাইবো প্রতিকার? স্থানীয়দের অভিযোগ, বিশ্বের কোথাও সম্ভবত চালু সড়কে এভাবে কাজ করা হয় না। তারা চেষ্টা করে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার। আর এখানে কী হচ্ছে! সাত দিনের কাজ, কিন্তু দুই মাস আগে মাটি খুঁড়ে লাপাত্তা ডিএনসিসি।
 
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করলে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা গুল্লাল সিংহ বাংলানিউজকে জানান, আমি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবো না। আপনি নির্বাহী প্রকৌশলী মোল্লা নুরুজ্জামান’র সঙ্গে কথা বলেন।  

আর মোল্লা নুরুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
 
আঞ্চলিক কর্মকর্তা সেলিম ফকির বাংলানিউজকে জানান, সাধারণত কাজের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। বিলম্ব হলে জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে মিরপুরের বিষয়ে খোঁজ না নিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। ভালো হয় যদি নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
এসআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।