ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মাদক মামলার বিচারে বিশেষ আদালত চায় র‌্যাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
মাদক মামলার বিচারে বিশেষ আদালত চায় র‌্যাব র‌্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদসহ অন্য অতিথিরা/ছবি- শাকিল

ঢাকা: বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি বিবেচনায় এনে মাদক মামলার বিচারে প্রতি জেলায় বিশেষ আদালত গঠনের দাবি জানিয়েছেন র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। একইসঙ্গে মাদক মামলায় বন্দিদের জন্য আলাদাভাবে বিশেষ কারাগারের প্রয়োজনীয়তার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

রোববার (২৯ জুলাই) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আয়োজিত ‘মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনরোধে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ কথা জানান।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘৪ মে থেকে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে র‌্যাবের প্রায় ২ হাজার মামলা হয়েছে।

আমি অবসরে চলে যাবো, তখনো দেখা যাবে এসব মামলার বিচার শেষ হবে না। তাই ৫-৬ বছরের জন্য মাদক মামলার বিচারে প্রতি জেলায় বিশেষ আদালত গঠনের দাবি জানাচ্ছি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের দিয়ে প্রতি জেলায় একটি করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ আদালত করা যেতে পারে। বিচারে আসামি খালাস পাক, তারপরেও বিচারটা হোক’।

৩৭ হাজার বন্দির ধারণক্ষমতার জেলখানায় ৯০ হাজার বন্দি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বন্দিদের ৪৪ শতাংশই মাদক মামলার। তার মানে জেলখানার ধারণক্ষমতার সমপরিমাণ বন্দি মাদক সংশ্লিষ্টতায়। সময় এসেছে এসব বন্দিদের জন্য বিশেষ কারাগার করার। বঙ্গোপসাগরের কোন দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোন জায়গায় সে কারাগার হতে পারে। দয়া করে এটা করে দিন, যাতে মাদক মামলার আসামিদের আলাদা করতে পারি। এতে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটাও সহজ হবে।

‘চাকরিতে প্রবেশের সময় ডোপ টেস্ট করার সিদ্ধান্তটি অবশ্যই ভালো খবর। আমি চাই এটা রেনডমলি চালু হোক। পৃথিবীর কোন দেশই মাদকমুক্ত নয়, তবে এটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে এটা আমাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ, যে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েই আমরা ঘরে ফিরবো’।

মাদক আইনে পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে র‌্যাব ডিজি বলেন, মাদকের ঘটনায় একটি শাস্তি হতে হবে। মাদক বিক্রয়, সেবন সবক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সাজার বিধান থাকতে হবে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, কোনকিছু শুরু করলে একশ্রেণীর মানুষ চিৎকার শুরু করেন। তারা আসলে কি পেতে চান? জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময়ও দেখেছি তারা রাতের পর রাত টেলিভিশনে বসে চিৎকার করছেন। তারা অন্যের সুরে সুর মেলান, পুতুলনাচের মতো অন্যের ঈশারায় নাচতে থাকেন। তাদেরকে এটা থেকে বেরিয়ে আসতে বলবো।  

‘তারা কি মনে করেন, আমরা কিছু বুঝিনা? চিৎকার করে লাভ নেই এ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী না হয়ে ঘরে ফিরবো না। এটা ১৬ কোটি মানুষের ডিমান্ড, সরকার ও রাষ্ট্রের ডিমান্ড। প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরবো। বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করে প্রতিবারই জয়ী হয়ে ফিরেছে। এ দেশ ১৬ কোটি মানুষের, মুষ্টিমেয় কয়েকজন ধান্দাবাজের দেশ না’।

তিনি বলেন, বর্তমানে যদি ৬০ লাখ মাদকসেবী হয়, তাহলে প্রতি ১৬ জনে একজন। তারা প্রতিদিন যদি একটি করেও ইয়াবা সেবন করে তাহলে ১৮০ কোটি টাকা, আর বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল মিলে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হয় বছরে। বর্তমানে যে যুদ্ধটা হচ্ছে, সাপ্লাই কাট পর্যায়, ডিমান্ড কাট আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।  

কক্সবাজারে র‌্যাবের ৭টি ক্যাম্প রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী ইয়াবার চালান কমেছে। কিন্তু বেলুনের মতো আরেকদিকে ফুলে উঠেছে, এখন শুরু হয়েছে সিলেট রুটে। র‌্যাব-পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড সবাই মিলে আমরা ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করবো। দেখতে চাই মাদক ব্যবসায়ীরা কোথায় যায়?

সাংবাদিকরা মাদকবিরোধী অভিযানে সহযোগিতা করায় ধন্যবাদ জানিয়ে করে তিনি আরো বলেন, কিন্তু গত ১০ বছরে কক্সবাজার এলাকার কোন মাদক রিপোর্ট দেখি না। অনেকে বলেন, গডফাদার, গডমাদারের ভয়ে করেন না। তো এখন রিপোর্টার পাঠাচ্ছেন না কেন? আমরা দেখতে চাই, সেই গডফাদার, গডমাদার কারা? এখন অনেকে রিপোর্ট না করে সিএনএন'র সাংবাদিক এনে বা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের লোক এনে বক্তব্য নেন। সাংবাদিকতাকে টিকিট হিসেবে ব্যবহার করে এসব করা ঠিক হবে না, সাংবাদিকতার নৈতিকতার সঙ্গে এসব যায় না বলেও মন্তব্য করেন র‌্যাব ডিজি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।