গত বছরের বন্যায় ব্রহ্মপুত্র গ্রাস করে নেয় সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কলমু এফএনসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। এতে বাধ্য হয়ে নয় মাস ধরে বিদ্যালয়টির দেড় শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাঠে।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীরা প্রচণ্ড রোদ আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে কামারজানি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাঠে একটি অস্থায়ী টিনের চালার নিচে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। মাটিতে বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে অনেক কষ্ট করে তারা ক্লাস করছে। জায়গা না হওয়ায় অনেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বারান্দা ঘেষেই ক্লাস করে যাচ্ছে। এতে করে এ এলাকার দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি খোলা মাঠে পাঠদানের কারণে তাদের স্কুলে উপস্থিতির ব্যাপারে অনিহা দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, কলমু এফএনসি বিদ্যালয়টি ১৯৪৫ সালে স্থানীয় সুধী সমাজের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়। বিদ্যালয়টিতে পাঁচ শিক্ষকের পদ থাকলেও তিনজন শিক্ষক দিয়েই তাদের কার্যক্রম চলছে। গত বছরের ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটি নদী গর্ভে চলে যায়। সেই থেকেই বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাঠে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, একদিকে শিক্ষক সংকট অন্যদিকে বিদ্যালয়ের ভবন নদীতে চলে যাওয়ার পর কোন রকমে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের খোলা মাঠে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘটছে।
তিনি আরো জানান, স্থায়ী জায়গা ও পড়াশোনার পরিবেশ না থাকায় এই বিদ্যালয়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অন্যত্র যেতে বাধ্য হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টির জন্য একটি জায়গা কেনা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসন তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে কয়েকটি টিনের ঘর তৈরি করে সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ক্লাস শুরু করতে পারবো।
বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা খাতুন ও তার কয়েকজন সহপাঠী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরমের মধ্যে ক্লাস করি। রাস্তা দিয়ে লোকজন যাওয়া আসা করে এতে মনোযোগ নষ্ট হয়। এছাড়া এখানে কোন টিউবওয়েল ও টয়লেট নেই। আমরা অতি দ্রুত একটি ভাল ক্লাসরুম চাই।
দেলোয়ার হোসেন ও আনিসুর রহমানসহ কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় সন্তানরা স্কুলে যেতে অনিহা প্রকাশ করে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা এ বছর তাদের পড়াশোনা তেমন ভাল হয়নি, তাদের ফলাফল নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শফিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়টির জন্য ২৮ শতাংশ জায়গা কেনা হয়েছে। জেলা প্রশাসন তিন লাখ টাকাও বরাদ্দ দিয়েছে। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়টির অবকাঠামো তৈরি জন্য কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে বিদ্যালয়টির জন্য অস্থায়ীভাবে ক্লাসরুম নির্মাণ করা হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা অন্তত নিরাপদে ক্লাস করতে পারবে। এছাড়া স্থায়ী ভবন ও দুইজন শিক্ষকের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই বিদ্যালয়টির জন্য পাকা ভবন তৈরি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৮
এনটি