শুধু গঞ্জপাড়া নয়, তীরবর্তী কালাডেবা, রাজ্যমণি পাড়া, বটতলীসহ বিস্তীর্ণ এলাকা চেঙ্গী নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকার শতাধিক পরিবার নদীর ভয়াল গ্রাসের শিকার হয়ে অন্যত্র যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ির উত্তর গঞ্জপাড়া এলাকার বাসিন্দা মংসানুর মগ। নদী তীরবর্তী এলাকায় জমি, বসতভিটাসহ প্রায় ৩৫ শতক জায়গা ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভাঙতে ভাঙতে ২ শতকের চেয়ে একটু বেশি জায়গা আছে তার। তিনি বলেন, নদীর ভাঙনের কারণে তিনবার ঘর বদলে পেছনে এসেছি। এখন আর রক্ষা নেই। এবার বর্ষা মৌসুমে বাকি অংশও বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘরের সামনে বসে তরকারি কুটছিলেন সুনুপ্রু মারমা। নদীর ভাঙা পাড় থেকে ঘরের দূরত্ব সর্বোচ্চ তিন হাত। বেশ কয়েক দফায় নদীগর্ভে নিজের ঘর বিলীন হওয়ার পর সবশেষে তোলা ঘরটিও বিলীন হওয়ার পথে। আর নিস্তার নেই। এবার ভাঙলে মাথা গোজার ঠাঁই নেই আর। তাই চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ।
সাংবাদিক দেখেই আক্ষেপটা যেন বেড়ে গেলো তার। ভাঙা বাংলায় বললেন, প্রতিবছরে একবার এসে শুধু ছবিই তুলে নিয়ে পত্রিকায় ছাপান। কই সরকার তো আজ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নিলো না। যদি উদ্যোগ নিতো তাহলে আমাদের এই দুর্গতি হতো না। আবার এসে আমার ঘর বিলীন হয়ে যাওয়ার খবর নিয়েন।
বটতলী এলাকার বাসিন্দা আপ্রুশি মারমা ও সাপ্রু মগ বলেন, আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। নদীর ভাঙন থেকে বাচঁতে অনেকবার ঘর স্থানান্তর করেছি। আর স্থানান্তর করার জায়গা নাই। এবার ভাঙনে নির্ঘাত ঘর যাবে।
এমনি চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে ওই এলাকার আরও বহু পাহাড়ি ও বাঙালি পরিবার। গঞ্জপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্মশান, বৌদ্ধদের শ্মশানঘাট ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। গঞ্জপাড়ায় অবস্থিত দ্বিতীয় চেঙ্গী সেতুর পশ্চিম পাশের মাটি ধসে পড়েছে।
তীরের বাসিন্দা ফারুক মিয়া ও আশরাফ মিয়া বলেন, নদী ভাঙন বন্ধ করার জন্য অনেকবার আন্দোলন করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও আমাদের কষ্ট দেখেও দেখে না।
খাগড়াছড়ির গোলাবাড়ী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ক্যাংচাইন মারমা বলেন, শত শত একর জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শহরঘেঁষা এই এলাকার দিকে সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। প্রতিনিয়ত ভেঙেই যাচ্ছে।
তিনি নদী ভাঙন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
এদিকে খাগড়াছড়ি শহর রক্ষার উদ্দেশ্যে শান্তিনগর, মুসলিমপাড়া দিয়ে ১২/১৪ বছর আগে নদী শাসন প্রকল্প কাজ শেষে দীর্ঘদিনেও এর রক্ষাণাবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে ইতোমধ্যে শান্তিনগর দিয়ে পাথর সরে দীর্ঘ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ শামছুল তাবরীজ বলেন, নদী ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেটি অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে। নদী ভাঙন ও নদী খনন করার লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে বৈঠক করে একটি মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৮
এডি/আরআর