শুক্রবার (২৭ জুলাই) গাবতলী পশুর হাটে কথা হয় কয়েকজন গরুর ব্যবসায়ীর সঙ্গে। এবারের ঈদুল আযহায় কোরবানির চাহিদা মেটাতে দেশি গরুই যথেষ্ট বলে মনে করছেন তারা।
জানা যায়, গত বছর ঈদের আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য গরুর বেশ সংকট দেখা দিলেও এবার দেশের গোয়াল ও খামারে পর্যাপ্ত কোরবানিযোগ্য পশু আছে। গত বছর বিক্রি না হওয়া অনেক গরু এবার হাটে উঠতে চলেছে।
কুষ্টিয়া দৌলতপুরের গরু ব্যবসায়ী ইব্রাহিম খলিল। প্রতি বছর ঈদুল আযহার মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার গরু বেচাকেনা করেন তিনি। এবার দেশে প্রচুর গরু আছে বলে দাবি তার।
ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘আমাদের ধারণা এবার ইন্ডিয়া থেকে যদি মাল (গরু) না আসে তবে ইলাকার (এলাকার) চাষি-খামারিরা বাঁচবে। এবার গ্রামে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাল আছে। চাষিরা খরচা পাতি করেই এগুলো রাখিচে (পালন করে)। অন্যান্য বছরের চেয়িতে (চেয়ে) ইবার গরুর জন্য খরচো পাতিও বেশি। যদি ইন্ডিয়ার মাল না আসে তবে চাষিরা কিছু ট্যাকা পাবে আর ভারত থেকে মাল আসলে চাষিরা লসের মধ্যে পড়বে। কোরবানিতে দ্যাশাল (দেশি) গরুই মেকাপ দিতে পারবে’।
গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় গো খাদ্যের দাম একটু বেশি। ফলে গরু পালনে চাষি ও খামারিদের বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। বছরের ব্যবধানে প্রতিকেজি কুঁড়ার দাম ১৭ থেকে বেড়ে ২৫ টাকা, ভুসি ৪০ থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে। একটা ছোট খড়ের আঁটি ১২ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে।
বর্তমানে গমের ভুসি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগে ছিল ১০০০ টাকা। একইভাবে ডাল-ভুসির (মুগ) দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা, এখন ১ হাজার ৮০০ টাকা। মসুরির ভুসি ১০০০ থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরিষার খৈলের দামও আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে।
গো-খাদ্যের দাম বাড়লেও গরুর দাম তেমন বাড়েনি বলে দাবি বেপারীদের। বর্তমানে ৪৫০ টাকা কেজি দরে গরু বিক্রি হচ্ছে। এই হিসেবে মণ প্রতি গরুর মাংসের দাম পড়ছে ১৮ হাজার টাকা। এভাবে তিন মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন একটি গরুর দাম পড়বে প্রায় ৫৪ হাজার টাকা।
হাটঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে কসাইয়ের গরুই বেশি। এখনও কোরবানির গরু তেমন বাজারে ওঠেনি। তবে কয়েকটি ঘাটালে কোরবানির জন্য গরু পালন করতে দেখা গেছে। এসব গরুর দাম ঈদের সময় ২০ হাজার টাকা মণ হবে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
মানিকগঞ্জ সিঙ্গাইরের বেপারী আব্দুল মালেক বলেন, বাপু গরুর বেবসা (ব্যবসা) কাঁচা বেবসা। এক আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না, কখন কি দাম হয়। এখন ১৮ করে চলছে (প্রতি মণ গরুর মাংসের দাম ১৮ হাজার টাকা) কোরবানির সময় ২০ হবে। ভারতের গরু আসলে ১৫ও হতে পারে। ভারত বেশি গরু ছাড়লে দ্যাশাল চাষি আর চাষি থাকবে না মইরে ভূত হবে।
ঈদের এক সপ্তাহ আগে গাবতলীর হাট শুরু হবে। হাটের স্পেস আগের মতোই থাকবে। তবে মোহাম্মদপুর বসিলা হাটের ওপর নির্ভর করবে গাবতলী পশুর হাটের স্পেস বৃদ্ধির করা হবে কিনা। কারণ, মোহাম্মদপুর বসিলা হাটে পশু বেশি আমদানি হলে গাবতলীতে কম হয়। সারা বছর গাবতলী পশুর হাটে গরু, মহিষ, ছাগল, উট, দুম্বার হাছিল খরচা শতকরা সাড়ে ৩ টাকা। তবে কোরবানির ঈদের দিন ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গাবতলী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে আমরা প্রস্তুতি শুরু করি। বসিলা হাটের উপর নির্ভর করে আমাদের প্রস্তুতি। কারণ বসিলা হাটে পশু বাড়লে আমাদের এখানে কমে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, গত কোরবানির ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ পশু বেচাকেনা হয়েছে। এবার কোরবানিতে গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল মিলে ১ কোটি ১৬ লাখ মজুদ আছে। এগুলো কোরবানির ঈদে বেচাকেনার জন্য প্রস্তুত। এছাড়াও নিজেরাই পালন করে কোরবানি দেবে এমন পশুর সংখ্যা তিন লাখ।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির ঈদে প্রয়োজনের তুলনায় ১৪ লাখ অতিরিক্ত পশু আছে। আমার মতে, কোরবানি উপলক্ষে ভারত থেকে কোনো পশু আমদানির দরকার নেই। দেশীয় খামারি ও চাষিরাই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে পারবে। বাইরে থেকে পশু আমদানি হলে খামারি ও চাষিদের জন্য বড় ক্ষতি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৮
এমআইএস/এনএইচটি