মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) দুপুরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক পেট্রোবাংলার পরিচালক (মাইন অপারেশন) মো. কামরুজ্জামানসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল খনি ইয়ার্ড পরিদর্শনসহ কাগজপত্র দেখেন এবং খনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ঢাকা ফিরে গেছেন।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) তোফায়েল আহমেদ ও উপ-মহাব্যবস্থাপক ডিএম জোবায়েদ হোসেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) জোবায়ের আহমেদ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ পরিচালক বেনজির আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল কয়লা উধাও ঘটনার অনুসন্ধান করতে খনি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। একই দিন বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুদক কমিশনের উপ পরিচালক শামসুল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন ও উপ সহকারী পরিচালক এ এস এম তাজুল ইসলাম। কমিটির কাজে পরামর্শ ও তদারকি করবেন দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলম।
এছাড়া সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে এবং খনি এলাকা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছে।
এদিকে, কয়লা খনির ইয়ার্ড থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি সিস্টেম লস, হিসাবের গড়মিল নাকি চুরি এ বিষয়ে নানারকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কয়লা খনির কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা, কয়েকজন খনি বিশেষজ্ঞ এবং কয়লা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন এমন কয়েকজন বলছেন এটি সিস্টেম লস। সময়মত সমন্বয় না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কয়লা খনির কর্মকর্তারা দাবি করছেন- ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবরে বড়পুকুরিয়া খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে চলতি বছরের ২৭ জুন পর্যন্ত কয়লা উৎপাদন করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সিস্টেম লস ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। যার পরিমাণ উধাও হয়ে যাওয়া কয়লার সমপরিমান অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টন। বলা হচ্ছে ১৩ বছরের এ ঘাটতি।
কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সময়ের বাৎসরিক রিপোর্ট বলছে অন্য কথা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের রিপোর্টে মজুদ কয়লার পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৩৬ হাজার ২৮৬ মেট্রিক টন। এ সময় পর্যন্ত কয়লা উত্তোলন দেখানো হয়েছে ৭০ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। সূত্র বলছে, খনি কর্তৃপক্ষের হিসাবে ৭০ লাখ ৫৮ হাজার টন কয়লা উৎপাদনে সিস্টেম লস ৩৬ হাজার টন।
২০১৫-২০১৬, ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ এই তিন অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩০ লাখ ৪১ হাজার টন কয়লা। এই পরিমাণ কয়লায় সিস্টেম লস ১ লাখ ৬ হাজার টন। যদি সাড়ে ৭০ লাখ টনে সিস্টেম লস ৩৬ হাজার হয়, তাহলে ৩০ লাখ ৪১ হাজার টনে সিস্টেম লস ১ লাখ ৬ হাজার হয় কিভাবে ?
অপরদিকে, স্থানীয় কয়েকজন কয়লা ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী বলছেন বিষয়টি চুরি। কিন্তু কিভাবে তা তারা বলতে পারছেন না। কারণ কয়লা খনির সে সিস্টেম তাতে করে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া এক কেজি কয়লাও খনি থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। মার্কেটিং বিভাগ, হিসাব বিভাগ পার হয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমতি এরপর খনির নিরাপত্তা বিভাগের ছাড়পত্র পেলেই কেবলমাত্র কয়লা বাইরে বের হতে পারে। তাছাড়া ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা নিয়ে যেতে প্রায় ৭ হাজার ট্রাকের প্রয়োজন এবং এ জন্য অনেক সময়েরও দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
আরএ