ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লালমনিরহাট নির্বাচন অফিসের চেক জালিয়াতির অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
লালমনিরহাট নির্বাচন অফিসের চেক জালিয়াতির অভিযোগ

লালমনিরহাট: লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের তিনটি চেক জালিয়াতির করে প্রায় দুই লাখ টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনায় অফিস সহায়ক ওয়ালিউল ইসলাম (৫৫) সাতদিন ধরে লাপাত্তা। এ ঘটনায় নির্বাচন অফিসের সব কক্ষের তালা পরিবর্তন করা হয়েছে।

নির্বাচন অফিস ও ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য সোনালী ব্যাংক লালমনিরহাট শাখায় (৩৩০০৩৮৫৮ নম্বর) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে এ অফিসের ব্যয় নির্বাহ হয়ে আসছে।

 

অফিসের কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও সিলমোহরে উত্তোলন হয় এ অ্যাকাউন্টের অর্থ, যা বেশিরভাগ সময় স্বাক্ষরিত চেক নিয়ে ব্যাংকে যান ওই অফিসের সহায়ক ওয়ালিউল ইসলাম। চেকবই জমা রাখেন ওই অফিসের অফিস সহকারী তহমিনা বেগম।

গত ১০ জুলাই এমনিভাবে একটি চেক রেজিস্ট্রারে সমন্বয় করে স্বাক্ষর করেন নির্বাচন অফিসার আজাদুল হেলাল। কিন্তু ওইদিন টাকা উত্তোলন না করে চেকটি পকেটে রাখে দেন তিনি। তবে চেকবই তাৎক্ষণিকভাবে অফিস সহকারীর হাতে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখেন অফিস সহায়ক ওয়ালিউল ইসলাম।

ওইদিনই চেকবইসহ তিনটি চেক পাতা কেটে নেন অফিস সহায়ক ওয়ালিউল ইসলাম। সেই চেক দিয়ে কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ১০ জুলাই সোনালী ব্যাংক লালমনিরহাট শাখা থেকে এক লাখ ৭১ হাজার ৯৩০ টাকা উত্তোলন করেন তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় লালমনিরহাট শহরের জবা টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী রশিদুল ইসলাম।

পরদিন ১১ জুলাই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সম্মানী ভাতা দিতে চেক নিয়ে ব্যাংকে যান নির্বাচন অফিসার আজাদুল হেলাল। কিন্তু ব্যাংকের ওই শাখায় টাকা নেই শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরে ব্যাংক স্টেটমেন্ট তুলে দেখেন তিনটি চেকে এক লাখ ৭১ হাজার ৯৩০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রাহক হিসেবে ওই হিসাব নম্বরে ব্যবহৃত চেকের ছায়ালিপি ও ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দাবি করেন নির্বাচন অফিসার। কিন্তু বিধি সম্মত নয় দাবি করে ব্যাংক ব্যবস্থাপক সেই চেকের ছায়ালিপি দিতে অস্বীকার করেন।  

এ ঘটনায় ওইদিনই চেক তিনটির (৪৪৫৭৫৭০, ৪৪৫৭৫৭২, ৪৪৫৭৫৭৭)  ছায়ালিপি চেয়ে ব্যাংক ব্যবস্থাপক বরাবরে লিখিত আবেদন করেন তিনি।

যেখানে বলা হয়েছে, তার অফিসের সহায়ক ওয়ালিউল ইসলাম ‘স্বাক্ষর জালিয়াতি’ করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।  

লিখিত আবেদনের পর জবা টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী রশিদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে নির্বাচন অফিসারকে জানান, পাওনার টাকার বিপরীতে নির্বাচন অফিসের সহায়ক ওয়ালিউল ইসলাম তাকে এ চেক দিয়েছেন। তাই টাকা তিনিই উত্তোলন করেছেন। এ ঘটনার পর ওই অফিস সহায়ক লাপাত্তা রয়েছেন। আরও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১১ জুলাই নির্বাচন অফিসের সব তালা পরিবর্তন করে নতুন তালা লাগানো হয়েছে।

জবা টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী রশিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অফিস সহায়ক ওয়ালিউল ইসলাম পাওনা তিন লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ৯৭ হাজার টাকার একটি চেক দিলে তিনি তা ব্যাংক থেকে তুলে নেন। চেকটিতে অফিস সহকারী ও কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও সিলমোহর দেওয়া ছিলও বলেও দাবি করেন তিনি। এছাড়া ওই সহায়কের দেওয়া আরও দুটি চেক রয়েছে তার কাছে।

সোনালী ব্যাংক লালমনিরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ হেলালী বাংলানিউজকে বলেন, চেকের বাহককে টাকা দিতে বাধ্য ব্যাংক। তবুও চেক দাতা রশিদুলের মোবাইল নম্বর চেকের অপর পাতায় লিখে নেওয়া হয়েছে। তবে চেক পাতার ছায়ালিপির আবেদনটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে গ্রাহককে দেওয়া হবে।

সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ইউএনও) আজাদুল হেলাল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকে চাপ দেওয়ায় ব্যাংকের বরাত দিয়ে রশিদুল ফোনে জানায় তিনি টাকা তুলেছেন এবং চেকপাতা ওয়ালিউল হস্তান্তর করেছেন। ঘটনার জানার পর থেকে তার অফিস সহায়ক লাপাত্তা রয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

চেকের ছায়ালিপি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানা ইউএনও।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad