ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

তিনি একজন যৌন নিপীড়ক শিক্ষক!  

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
তিনি একজন যৌন নিপীড়ক শিক্ষক!  

ময়মনসিংহ: সহকর্মী তিন নারী শিক্ষককে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, ছবি এডিট করে ইনবক্স করা, তাদের চুলে-গালে হাত দিয়ে আবার পরক্ষণেই ক্ষমা চাওয়া তার নিত্যদিনের অভ্যাস। অকপটে আবার নিজের মুখে এমন কু-কর্মের কথা স্বীকারও করেন তিনি। 

দিনের পর দিন এই নারী শিক্ষকদের কাছে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন একজন ‘যৌন নিপীড়ক’ হিসেবে। অথচ তিনি নিজেও একজন মানুষ গড়ার কারিগর।

তার নাম রুহুল আমিন।  

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানবি) নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। এবার তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ করেছেন একই বিভাগের তিন নারী শিক্ষক।  

ওই শিক্ষকের আচরণের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তার সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া থেকেও বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে তারা এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তের কঠোর শাস্তিও দাবি করেছেন।  

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে শুরু হয়েছে তোলপাড়। নানা সমালোচনার পর বুধবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  

নাট্যকলা বিভাগের এক নারী শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি (রুহুল আমিন) আমাদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। তার অঙ্গভঙ্গিও নোংরা।  

‘প্রায় দেড় মাস আগে আমরা রেজাল্টের কাজ করছিলাম। তিনি (রুহুল আমিন) নম্বর বলছিলেন, আমি পোস্টিং দিচ্ছিলাম। তখন একজন ডেমনোস্ট্রেটরও সেখানে ছিলেন। হঠাৎ তিনি আমার চুল ছুঁয়ে বলেন, ম্যাডাম চুলগুলো অনেক সুন্দর। তাৎক্ষণিক আমি তাকে সাবধান করি। ’

তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) দুপুরে একাডেমিক সভা শেষে পরীক্ষা কমিটির কাজ করার সময় শিক্ষক রুহুল আমিন আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে টিপ্পনি কাটেন। আমি সবার সামনেই এই ঘটনার প্রতিবাদ করি। তিনি ক্ষমা চান।  

‘‘এর কিছুক্ষণ পরই ওই শিক্ষক বিষয়টি আপোস-মিমাংসা করতে এসে আমাকে বলেন, ‘আমি রিয়েলি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি। এজন্যই বারবার এমন হয়ে যায়। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় আমার ছবি এডিট করে কুরুচিপূর্ণভাবে পাঠান এবং অশ্লীল কথাবার্তা টেক্সট করেন। তার অশালীন আচরণ ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। আমরা তার কঠোর শাস্তি চাই,’’ বলেন ওই শিক্ষিকা।  

একই রকম অভিযোগ করে নাট্যকলা বিভাগের আরেক নারী শিক্ষক বলেন, ২০১৪ সালে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের কিছুদিন পর রুহুল আমিন একদিন ডিপার্টমেন্টে আমার চুলে হাত দিয়েছিলেন এবং গালে ধরার চেষ্টা করেন। তখন আমি সরে গিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসি।

‘কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমাণ না থাকায় আমি অভিযোগ করিনি। তবে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধানকে আমি বিষয়টি জানিয়েছিলাম। ’ 

তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গেও তিনি একই রকম কাণ্ড ঘটানোর পর আমরা তিন নারী শিক্ষক তার বিরুদ্ধে উপাচার্যের কাছে মঙ্গলবার  বিকেলে লিখিত অভিযোগ করেছি। ’ 

নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনের এমন কাণ্ডকীর্তির শিকার হয়েছেন একই বিভাগের আরো এক নারী শিক্ষক। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, তার আচরণ, ভাষা, ইশারা সবকিছুই নোংরা। তিনি বিভিন্ন সময় আমার হাত ধরার চেষ্টা করেন এবং শাড়ি পড়া নিয়ে অশালীন কথা বলেন।

‘‘তার সঙ্গে কাজ করলে আমরা অনেক সতর্ক থাকি। কখন যেন কী করে বসেন। তিনি কোনো কু-কীর্তি করেই ক্ষমা চান আবার পরক্ষণেই একই কাজ করেন। তার সঙ্গে কাজ করতে আমরা নিজেদের ‘অনিরাপদ’ ভাবছি। আমরা তার কঠোর শাস্তি দাবি করছি। ’’

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত রুহুল আমিনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে তিন নারী শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।  

একই সঙ্গে এ অভিযোগ তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।  

ড. হুমায়ুন কবির বলেন, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী স্থায়ীভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এসব ঘটনায় দ্বায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহেদুল কবীরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।  

তিনি জানান, সহকারী প্রক্টর ড. উজ্জল কুমার প্রধানকে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।