ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হস্তক্ষেপ আদালত অবমাননার শামিল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৮
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হস্তক্ষেপ আদালত অবমাননার শামিল সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আদালতের সিদ্ধান্তে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের আদেশ অগ্রাহ্য করে ভিন্নতর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, এটা করা হলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে।

বুধবার (১১ জুলাই) সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক কার্যক্রম বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আ. ক. ম মোজাম্মেল হক।
 
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন, তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, এ সরকার যেহেতু আইনের প্রতি শ্রদ্দাশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তাই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হস্তক্ষেপ করা হবে না এবং মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না।


 
হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন (নং-২৩৫/২০১২) এর রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকরা সিভিল পিটিশনের আদেশে আপিল বিভাগের আদেশ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা কোটা থেকে পূরণ করার সুযোগ থাকলেও ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
 
‘তাই এ আদেশ অগ্রাহ্য করে বা পাস কাটিয়ে বা উপেক্ষা করে ভিন্নতর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। এটা করা হলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে বলে আমি মনে করি। সরকার এ ব্যাপারে সচেতনতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমরা আশা করি। ’
 
এ বিষয়ে আদালতের রায়ের কপি সকালে কোটা সংষ্কারে গঠিত সরকারের কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।  
 
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে, আদালতের নির্দেশ যতক্ষণ পরিবর্তন না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যত্যয় ঘটার কোনো সুযোগ নাই।
 
মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংষ্কারের বাধা আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রথমে আদালতে ভ্যাকেট করাতে হবে। সরকারের আপিল বিভাগে আবার রিভিউ পিটিশন করে যদি আদালত ভিন্নতর কোনো নির্দেশ দেন তাহলে শুধু পারবেন। বিদ্যমান এই আদেশ বহাল থাকা পর্যন্ত কোনো সুযোগ নাই। …এই সরকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই সরকারের কোনো সুযোগ নাই। তবে সরকার চাইলে আইনের বাইরে অন্যান্য কোটা যেমন জেলা কোটা, মহিলা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
 
জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা এবং সরকারের উদ্যোগের পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে অবস্থান জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।  
 
তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, প্রতিনিয়তই মুক্তিযোদ্ধা-তাদের সন্তানদের টেলিফোন পাচ্ছি যে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী বা তাদের কোটা; মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। সেজন্য তাদের প্রশ্নের এক এক করে জবাব দিয়ে যাচ্ছি, এখন যেহেতু কমিটি গঠন হয়েছে, কমিটির কাছে আমার বক্তব্য উনাদের দৃষ্টি গোচর করার জন্য সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি।
 
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘ দিনের। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধাসরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণকরা প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।
 
পরে বিভিন্ন সময়ে এ কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করেছে সরকার।
 
বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, পশ্চাদপদ জেলাগুলোর জন্য কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ শতাংশ কোটা পদ্ধতি সংরক্ষিত চালু আছে। সব মিলিয়ে শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা পদ্ধতি রয়েছে।
 
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা/বাতিল অথবা সংস্কারের লক্ষ্যে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গত ৮ জুলাই প্রথম বৈঠকে বসে দেশে-বিদেশে কোটার তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
 
কোটা ব্যবস্থা সংষ্কারের দাবিতে দীর্ঘ দিন আন্দোলন করে আসছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলন করে আসছে, আর মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ অন্যান্য কোটা বহাল রাখতে দাবি জানিয়ে আসছে সংশ্লিষ্ট পক্ষ।
 
গত ৬ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক আদেশে বলা হয়, ‘সব সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হইলে সে সব পদ মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের মধ্য হইতে পূরণ করিতে হইবে। ’
 
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ আদেশের জন্য আদালতে যেতে হবে না। শূন্য থাকলে চিরদিনই পদ ফাঁকা থাকতে পারে না মেধাবী ছেলেদের জন্য…।   
 
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৮
এমআইএইচ/এসএইচ​

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।