মঙ্গলবার (১০ জুলাই) দুপুরে বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ শান্তিনগর এলাকার ভাড়া বাসায় কথাগুলো বলছিলেন শীতলক্ষ্যা নদীতে ট্রলারের ছাউনি ভেঙে নদীতে ডুবে মারা যাওয়া আনোয়ার হোসেন ফালানের বড় মেয়ে আলমিনা মরিয়ম। সে বন্দরের ইব্রাহিম আলম চাঁন মডেল স্কুলের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আনোয়ার হোসেন ফালান (৩৫) একই এলাকার জিয়াবুল হকের ছেলে। স্ত্রী রাশেদা বেগম, বড় মেয়ে আলমিনা মরিয়ম (১৪) মেঝ ছেলে রাশেদ (১২) ও ছোট ছেলে আবিদকে (৯) নিয়ে বসবাস করতেন। বড় মেয়ে স্কুলে পড়ালেখা করলেও ছোট দুই ভাই স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে।
আলমিনা মরিয়ম বলেন, আমরা খুব গরিব। মা অন্যের বাসায় কাজ করেন আর বাবাও দিনমজুর। দু’জন খুব কষ্ট করে আমাদের তিন ভাই বোনকে পড়লেখা করাতো। না খেয়ে থাকলেও পড়ালেখা বন্ধ হতে দেয়নি।
আনোয়ার হোসেন ফালানের শ্যালক সামসুল আলম বলেন, বোন আট মাসের গর্ভবতী। আরও তিন ভাগ্নে ভাগ্নি পড়ালেখা করে। ওদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। বোন এখন কি করবে কোথায় যাবে বলতে পারছি না। আমরাও এতো ভালো অবস্থা না যে সহযোগিতা করবো। সুন্দর সংসারটা শেষ হয়ে গেলো।
আনোয়ার হোসেন ফালানের পরিবারের মতোই এক মাত্র উপার্জনের ব্যক্তি এ ঘটনায় নিহত দীন ইসলাম। স্ত্রী ঝিনুক ইসলাম ও তিন বছরের মেয়ে দিনিয়া ইসলামকে নিয়ে বন্দর শান্তিনগর এলাকার নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি। নিজের পরিবার ছাড়াও দেখতে হতো মা, দুই বোন ও অসুস্থ বড় ভাইয়ের পরিবারকেও। এখন পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দীন ইসলাম সোমবার রাতে নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই তার স্ত্রী ঝিনুক ইসলামের আহাজারি কিছুতেই থামছে না। মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, বিলাপের সুরে কাঁদছেন তিনি।
ঝিনুক ইসলাম বলেন, অন্যদিন কাজে যাওয়ার আগে মেয়েকে নিয়ে খেলা করে আমার সঙ্গে কথা বলে কিন্তু সোমবার (৯ জুলাই) দিন কাউকে কিছু না বলেই চলে যায়। রাতে বাসায় আসার আগেও ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করে মেয়ের জন্য কিছু আনতে হবে কিনা। কিন্তু সোমবার রাতে ফোন দেয়নি। পরে ভাগ্নে সুমন এসে বলে মামী আসার সময় ট্রলার ডুবে গেছে মামাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
দীন ইসলামের বড় বোন উম্মে কলসুম বলেন, চার বছর আগেই পারিবারিকভাবে দিন ইসলামের সঙ্গে ঝিনুকের বিয়ে হয়। এখনই এমন হবে কে জানতো। দুই বোন বিয়ের বাকি, বড় ভাই হৃদরোগে আক্রান্ত, মা অসুস্থ এখন কে দেখবে তাদের। আমাদের সংসারটাই শেষ হয়ে গেছে।
আনোয়ার হোসেন ফালান ও দীন ইসলামের মতো পরিবারের একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি না হলেও বাবা-মায়ের আদরের সন্তান ছিল রায়াত আহম্মেদ ইমন। টাকার অভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি কারখানায় চাকরি নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৮
এমআইএস/আরবি/