ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নির্মাণকাজ শেষের আগেই ছাদ চুঁইয়ে পড়ছে পানি

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৮
নির্মাণকাজ শেষের আগেই ছাদ চুঁইয়ে পড়ছে পানি ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি

খুলনা: খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সের অডিটোরিয়ামের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সামান্য বৃষ্টিতে একাধিক স্থান থেকে চুঁইয়ে পানি পড়ছে অডিটোরিয়ামে।

মঙ্গলবার (০৩ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এমন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তদারকির অভাবে শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণের শেষদিকে নিম্নমানের ইট, বালু, সিমেন্ট ও পাথর দিয়ে দায়সারা কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সংস্কৃতিকর্মীদের।

তারা বলছেন, খুলনার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল এ শিল্পকলা একাডেমির কাজে অনিয়ম হলেও কেউ দেখার নেই। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে ক্ষোভ ঝাড়ছেন, চাচ্ছেন প্রতিকার।

আব্বাস উদ্দীন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাচ্চু তার ফেসবুকে লিখেছেন- “হালকা বৃষ্টি খুলনায়! এতেই ডুবে যাচ্ছে খুলনার স্বপ্ন, খুলনাবাসীর স্বপ্নের শিল্পকলা একাডেমির মূল অডিটোরিয়ামের ছাদ দিয়ে এখনই পানি পড়ছে! আর সেই ভাঙা ইট দিয়েই চলছে শিল্পকলা একাডেমির মূল ভবনের কাজ! খুলনার সর্বস্তরের মানুষের মনে হয় আবার রাস্তায় নামতে হবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পের এই অবস্থা হলে আমরা কার কার কাছে যাব? খুঁটির জোরটা কোথায়?”
ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছেমুক্তিযোদ্ধা গীতিকার ও নাট্যশিল্পী এবং খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোকলেসুর রহমান বাবলু ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, শিল্পকলার ভবন নির্মাণে চরম অনিয়ম হচ্ছে। নবনির্মিত ভবন উদ্ধোধনের আগেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে খুলনার সংস্কৃতিকর্মীরা শুক্রবার বৈঠক করে কর্মসূচি ঘোষণা করবো। কোনভাবেই এ ধরণের অনিয়ম মেনে নেবো না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সের নির্মাণের ৮০-৮৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছ থেকে বিসিটিএই ইলোরা জেভি, বেনেজীর কনস্ট্রাকশন ও আজাদ কনস্ট্রাকশন যৌথভাবে নির্মাণকাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহানগরীর শেরে বাংলা রোডের পুরাতন নার্সিং ইন্সটিটিউটের জায়গায় শিল্পকলা একাডেমির আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা নেয় সরকার। এর আগে ২০১১ সালের ৫মার্চ খুলনার খালিশপুরের প্রভাতী স্কুল মাঠের জনসভায় অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে খুলনায় শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোপূর্বে দীর্ঘদিন ধরে খুলনার সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিকরা আন্দোলন করেন খুলনায় শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণের জন্য। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনাবাসীর সেই আশাপূরণ করেন।

২০১৬ সালের ১০ জুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিসিটিএই ইলোরা জেভি, বেনেজীর কনস্ট্রাকশন ও আজাদ কনস্ট্রাকশন যৌথভাবে খুলনার শিল্পকলা একাডেমির নির্মাণ কাজ পায়। শেরে বাংলা রোডে ৮১ শতক জমির ওপর দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১২ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার ২১৯ টাকা ব্যয় ধরে এ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৪ তলা কমপ্লেক্স নির্মাণে মোট লাগবে ৩০ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ১৮ মাস সময়ে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শিল্পকলা একাডেমির কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসিটিএই ইলোরা জেভি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সময় বৃদ্ধির আবেদন জানায়।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেনেজীর কনস্ট্রাকশনের পার্টনার কামরুল ইসলাম সাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, আমি বিষয়টি আজকে দেখেছি। বড় ঢালাই করতে গেলে কিছু সমস্যা হতে পারে। কিছু কনস্ট্রাকশন ফল্ট থাকতে পারে। এখন পানি যেখান থেকে পড়ছে সেখানে ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। দিলে ঠিক হয়ে যাবে।

গণপূর্ত অধিদপ্তর খুলনার এক্সইএন জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এই কাজ করার জন্য এই ঠিকাদার উপযুক্ত নয়। তাদের কাজে আমি নিজেও সন্তুষ্ট নই। ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে  ব্যবস্থা নিচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়:  ১৮২০ ঘণ্টা,  জুলাই ০৩ , ২০১৮
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।