জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে কক্সবাজারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের পথচলা শুরু। সেই সময়ে ১১টি পদে ২২ জনের কাজ করার কথা।
আরও জানা গেছে, একজন সহকারী পরিচালক ও দুইজন পরিদর্শক থাকলেও, তিনজন উপ-পরিদর্শকের স্থলে কর্মরত রয়েছেন দুইজন। এদের মধ্যে একজন পরিদর্শক ও একজন উপ-পরিদর্শক চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুর থেকে সংযুক্ত হয়ে কক্সবাজার জেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনজন সহকারী উপ-পরিদর্শকের পদই খালি। একজন অফিস সহকারী, সাতজন সিপাই ও গাড়ি চালক থাকলেও নেই ওয়ারলেস অপারেটর এবং অফিস সহায়ক। সাতজন সিপাইয়ের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম ও একজন রাঙ্গামাটি থেকে টেকনাফে সংযুক্ত হিসেবে কাজ করছেন। আউটসোর্সিং থেকে নিয়োগ পাওয়া নিরাপত্তা প্রহরী থাকলেও নেই কোনো পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
সব মিলিয়ে কক্সবাজার ও টেকনাফ সার্কেলে ১৫ জন কর্মরত থাকলেও মাঠে কাজ করেন ১১ জন। আর বাকি চারজনের দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। এরমধ্যে ছয়জন উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় কাজ করেন। তবে তাদের জন্য কোনো যানবাহন নেই। আর বাকি পাঁচজন জেলার অন্য ছয়টি উপজেলায় কাজ করেন।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের টেকনাফ সার্কেলের পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, টেকনাফ উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ লোক ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। অথচ এর বিপরীতে ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চলে টেকনাফ সার্কেল। আমি টেকনাফে গত ৩ মাস ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। আমার মতো এখানে দায়িত্বরত ছয়জনই সংযুক্ত হিসেবে টেকনাফ সার্কেলে কাজ করেন।
তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত ফোর্স ও অস্ত্র না থাকায় নিজেরাই সবসময় নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছি। তাছাড়া নিজস্ব যানবাহনের অভাবে প্রায়ই সময় সঠিক তথ্য থাকার পরেও দূরের স্পটগুলোতে অভিযান চালাতে পারি না। বিশেষ করে নিরাপত্তা ও যানবাহনের অভাবে রাতের বেলা অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। এছাড়া নারী ফোর্স না থাকার কারণে নারী ইয়াবা কারবারিদের তল্লাশি করতে পারি না।
পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের মতো যদি মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে পর্যাপ্ত লোকবল, অস্ত্র ও যানবাহন থাকত তবে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরালো হতো বলে মনে করেন পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন।
এ বিষয়ে মাদক নিরাময় কেন্দ্র ‘নোঙ্গর’-এর পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে রয়েছে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীবাহিনী। আর চোরাচালানের স্বার্থেই এদের সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও সমাজপতিদের। এছাড়া পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেও তাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠতা। অন্যদিকে ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতো খালি হাতেই এমন একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোমেন মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, এটা সত্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সংস্থার তুলনায় আমাদের সাফল্য খুবই কম। তাদের মতো সংকটহীনভাবে পথ চলতে পারলে আমাদের সাফল্য তাদের চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না।
তিনি জানান, এতো সংকটের মধ্যেও জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ৩৩২টি অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ৩১ হাজার ৫৪৮টি ইয়াবা, ৬ হাজার ৪০০ কেজি গাঁজা ও নগদ ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করে। জব্দ করে একটি বাস ও একটি মোটরসাইকেল। একইসঙ্গে ৫৫টি নিয়মিত মামলা করে এবং ৫৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। নিয়মিত মামলায় ১২৮ জনকে গ্রেফতার করে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ১১ জনকে জরিমানা ও ৪৬ জনকে কারাদণ্ড দেয়।
তিনি আরও বলেন, উখিয়া-টেকনাফকে বিশেষ জোন ঘোষণা করার পরিকল্পনা চলছে। তখন সেখানে একজন উপ-পরিচালকের অধীনে ৯৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করবে। তবে কবে নাগাদ এই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখবে তা বলা কঠিন। এর আগে টেকনাফ সার্কেলে ১০ জন আর্মড ব্যাটেলিয়ন যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তারা এখনও যোগ দেননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৮
টিটি/এনএইচটি/আরআর