ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বেনাপোল কাস্টমস রুটে বেড়েছে স্বর্ণ চোরাচালান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
বেনাপোল কাস্টমস রুটে বেড়েছে স্বর্ণ চোরাচালান বেনাপোলে বিভিন্ন সময়ে আটক স্বর্ণ চোরাকারবারীরা

বেনাপোল (যশোর): সীমান্তের অবৈধ পথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট কাস্টমস রুটে বিভিন্ন কৌশলে বেড়েছে স্বর্ণ চোরাচালান। মাঝে মধ্যে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা কিছু চালান আটক করতে পারলেও অধিকাংশই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই এ রুটে স্বর্ণ চোরাচালান বাড়ছে। আর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সুষ্ঠু অভিযান পরিচালনায় জনবল বৃদ্ধি ও স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ থাকলে পাচার রোধে সফলতা মিলবে।

জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথকে চোরাচালানীরা নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে স্বর্ণ পাচার। খুব সহজেই এ সীমান্তের রেলপথ, স্থলপথ আর জলপথে হচ্ছে স্বর্ণ চোরাচালান।  

কাস্টমস পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে শুধু বেনাপোল কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অধীনস্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ১৮ কেজি ১০৯ গ্রাম স্বর্ণের বার আটক হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় নয় কোটি ১০ লাখ টাকা। এসময় চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ২৫ জন বিভিন্ন দেশের নাগরিককেও আটক করা হয়েছে।

এদিকে স্বর্ণ বহনকারীরা আটক হলেও  গডফাদাররা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাস্টমস সদস্যরা স্বর্ণ পাচারকারীদের আটকের পর তাদের পুলিশে সোপর্দ করছেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের পুলিশ রিমান্ডে আনলেও রহস্যজনক কারণে গডফাদারদের নাম তালিকায় আসছে না। পাচারকারীদের কাছ থেকে যেসব তথ্য ও আলামত উদ্ধার হচ্ছে তাতে গডফাদারের কাছে পৌঁছানোর যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হলেও এ কাজে তেমন সফলতা নেই। ফলে কোনোভাবে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না পাচার কার্যক্রম।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, আগে এ পথে পাচারকারীরা তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগেজে স্বর্ণ বহন করলেও বর্তমানে কৌশল পাল্টেছে। এছাড়া পাচার কাজে আগে বাংলাদেশিদের ব্যবহার হলেও বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারতীয়দের ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা কখনো পায়ুপথে, কখনো প্যান্টের বেল্টের মধ্যে আবার কখনো প্যান্টের কাপড়ের সেলাইয়ের ভাঁজে অভিনব কৌশলে বহন করছেন স্বর্ণের চালান। যা শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিরাপত্তাকর্মীদের।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, যাদের স্বর্ণ পাচারকারী সন্দেহ হচ্ছে কাস্টমস সদস্যরা প্রথমে তাদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শরীর পরীক্ষা করছেন। সন্দেহ বেশি হলে তাদের কখনো ১০ কিলোমিটার দূরে নাভরণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এক্সরে মেশিন দিয়ে শরীর পরীক্ষা করা হচ্ছে।  

তবে এসব মেশিন উন্নত না হওয়ায় শনাক্ত করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এছাড়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া সন্দেহভাজন কাউকে এসব পরীক্ষায় বাইরে নিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব।  

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, স্বর্ণপাচারকারী গডফাদাররা খুব ধূর্ত। তারা নিজস্ব কোনো ফোন নম্বর দিয়ে সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। তাই তাদের আইনের আওতায় আনা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে তাদের ধরতে সবরকম চেষ্টা চলছে।  

বেনাপোল কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা অফিসের উপ-পরিচালক মো. সাইফুর রহমান সোমবার (২৫ জুন) সকালে বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে স্বর্ণ পাচারকারীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে স্বর্ণ পাচার করছে। তবে সতর্ক থেকে প্রতিরোধের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।  

তবে অভিযান পরিচালনার স্বার্থে তাদের জনবল বৃদ্ধি ও স্থানীয়ভাবে উন্নত এক্সরে মেশিন সরবরাহ থাকলে পাচাররোধে আরো সফলতা আসতো বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
এজেডএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।