বাবার হাত ধরে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো মালিয়া খাতুন জানায়, ‘এই পার্কে রাইডগুলো অনেক মজার। আমরা দুই ভাই-বোন আর বাবা মিলে অনেক আনন্দ করেছি।
সন্তানের কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাবা মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সন্তানের আনন্দেই আমাদের আনন্দ। এখানে এসে ছোট্ট সোনামণিরা আপনমনে খেলতে পেরেছে। মনের আনন্দে ঘুরছে। চিড়িয়াখানাটাও অনেক সুন্দর। দৃষ্টিনন্দন এই উদ্যানে প্রকৃতি, বাতাস ও নিসর্গ রয়েছে। পুরো উদ্যানটা ঘুরে অনেক ভালো লেগেছে। ’
শুধু মালিয়া বা মাহফুজই নন, ওদের মতো আরও অনেক শিশুই বাবা-মার হাত ধরে এই উদ্যানে ঘুরতে এসেছে। মেতে ওঠেছে বাঁধনহারা ঈদ আনন্দে। ছায়াঘেরা পরিবেশে দোলনা, চরকি, নাগরদোলা, চিড়িয়াখানা, নান্দনিক কৃত্রিম ফোয়ারা কিংবা নৌকায় চড়ে হই-হুল্লোড় করে আনন্দ করছে শিশুরাও। তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন বাবা-মায়েরাও।
ঈদের তৃতীয় দিন বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর প্রধান বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জয়নুল উদ্যান ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়। এ উদ্যানে শিশুদের পাশাপাশি বিনোদন প্রেমীদের পদভারেও মুখর হয়ে ওঠেছে। নানা বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে ব্রক্ষপুত্র নদ ঘেষা প্রকৃতির সৌন্দর্যের এ অপরূপ লীলা নিকেতন।
এ উদ্যানে রয়েছে স্টিলের পাইপের সীমানা প্রাচীর। পাকা স্ল্যাপের হাঁটার পথ, ফুলের বাগান, পার্কের মাঝে ঝর্ণা আর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ। ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বছরের পর বছরের ভগ্নদশা কাটিয়ে সাহেব কোয়ার্টার পার্কটিকে জয়নুল উদ্যান নামে নয়নাভিরাম ও আধুনিক রূপ দেন।
জয়নুল উদ্যানের বিশাল সবুজ প্রকৃতি আর ভেতকার অপরূপ সৌন্দর্য সন্তানদের দেখাচ্ছিলেন ঈমান আলী (৩৫)। নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ এলাকায় বাসিন্দা তিনি।
ঈমান আলীর দুই সন্তান ইমা ও শুভা মনিকে জাম্পিং বেবি কার ও মিনি লেইক রাইডে উঠিয়েছেন তিনি। ইমা ও শুভা মনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আব্বুকে নিয়ে অনেক রাইডে চড়েছি। আরও কিছু রাইডে চড়বো। ’
ঈমান আলী নিজের সন্তানদের নিয়ে এরপর ছুটে যান উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায়। সেই কথাই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই চিড়িয়াখানায় হরিণ, সজারু, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বন মোরগ, ঈগলসহ কতো কিছুই না আছে। উচ্ছ্বাস নিয়েই শিশুরা হরেক রকমের পশু-পাখির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। ’
জয়নুল উদ্যানের বাইরের পরিবেশও মনোরম। নৈসর্গিক ছন্দে রোমাঞ্চিত। এখানে ছায়াঘেরা পরিবেশে গড়ে উঠেছে চরকি, দোলনা, নাগরদোলাসহ কতকিছু। মা-বাবারা তাদের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন রাইডে ভিড় করছেন। চরকিতে চড়ে মহানন্দে মেতেছে শিশুরা। আর আদরের শিশু সন্তানদের চরকিতে চড়িয়ে তাদের বায়না মেটাচ্ছেন মা-বাবারা।
সুমাইয়া আরেফিন নামে এক শিশুর মা বাংলানিউজকে বলেন, ‘বছরের এই ঈদের সময়েই সন্তানদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হয়। বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসছেন। ’
এ উদ্যানে শিশুদের নিয়ে ঘুরতে এসে বাড়ি ফেরার আগে সুস্বাদু ও লোভনীয় চটপটি আর ফুচকা মুখে তুলছেন অনেকেই। এতে করে সকাল-সন্ধ্যা ধুমছে চটপটি আর ফুচকা বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আবার বিনোদন কেন্দ্রের ফুটপাতে শিশুদের পছন্দের বিভিন্ন পণ্যের দোকানেও চলছে জমজমাট বিকিকিনি। বেলুন, ফুটবল, বাঁশি, মুখোশ, পাজেলসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র শিশুদের কিনে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বাংলানিউজকে বলেন, ‘নগর বিউটিফিকেশনের আলোকে জয়নুল উদ্যানে মনোরম পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সব বয়সী মানুষের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও এই উদ্যান এখন এক বিশেষ আকর্ষণ। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে জয়নুল উদ্যানকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। ওদের জন্য চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন আধুনিক রাইডের মাধ্যমে খেলাধুলার পাশাপাশি বিনোদনের সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৮
এমএএএম/এনটি