ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বন্যার পানিতে ‘ভাসছে’ ঈদ আনন্দ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৮
বন্যার পানিতে ‘ভাসছে’ ঈদ আনন্দ বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বাঁধে। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু এবারের ঈদে আনন্দের ছোঁয়া নেই মৌলভীবাজার জেলার চার উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের মধ্যে। 

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে চার উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, টানা তিনদিনের বন্যায় এখন পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ, জুড়ি ও সদর উপজেলা। কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর, হাজিপুর, টিলাগাঁও ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ তিনদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন।  

রাজনগর উপজেলার কামারচাক, টেংরা ও মনসুর নগর ইউনিয়নের প্রায় ৭০টি গ্রাম ও কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর, মুন্সিবাজার, আদমপুর, ইসলামপুর ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।  

এছাড়া, নতুন করে সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ও কামালপুর, মনুমুখ ও আখাইলকুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জুড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্লাবন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর আশপাশে দ্রুত গতিতে পানি ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দেয়ায় রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে কয়েক এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে রাস্তা ও উঁচু স্থানে ভিড় করেছেন বানভাসী মানুষ। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়।

প্লাবিত এলাকামৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক সড়কের কদমহাটা এলাকায় দেখা যায়, মনু নদের বাঁধ ভেঙে ঢলের পানি এসে রাস্তা তলিয়ে গেছে। ফলে এ সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে আশপাশের ২০টি গ্রাম। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বানভাসী মানুষ অন্যত্র স্থানান্তর হতে পারছেন না। আটকা পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এতে করে নিরূপায় হয়ে পড়েছেন তারা। রাস্তা বন্ধ থাকায় দু’দিকে লাইন ধরে আছে কয়েকশ’ যানবাহন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বড়লেখা, জুড়ি, কুলাউড়া উপজেলার সঙ্গে।

এছাড়া ঢলের পানি ক্রমাগত মনু নদের পানি বাড়িয়ে তুলছে।  মৌলভীবাজার শহর প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে মনুর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর মাত্র ৬ সেন্টিমিটার পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচে জেলা শহরে পানি ঢুকতে পারে। এমতাবস্থায় চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে শহরজুড়ে। সচেতন মহল আশঙ্কা করছেন শহরে পানি প্রবেশ করলে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে শহর তলিয়ে যেতে পারে।

অপরদিকে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করতে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টিম। অধিকতর প্লাবিত এলাকায় তারা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

তবে উজানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহর ও তার আশপাশের বৃষ্টিপাতের পানি ধলাই হয়ে মনুতে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সর্বশেষ ধলাই নদের পানি বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ও মনুর পানি বিপদসীমার ১৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহর প্রতিরক্ষায় আমরা গার্ড ওয়ালের গোড়াতে বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরক্ষার চেষ্টা করছি যাতে বাঁধ উপচে পানি আসলেও বাঁধ ভেঙে না যায়।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তোফায়েল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সার্বিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। বন্যারর্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এ কাজে সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।